Dey Subhrajit 's Album: Wall Photos

Photo 39 of 250 in Wall Photos

ধর্ম ও Religion সমার্থক নয়। কয়েক হাজার বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্ম শব্দটির প্রকৃত অর্থ নিয়ে বিপুল আলোচনা হয়েছে।

অনুভবী ও সতর্ক ভারত তত্ত্ববিদের কাছে , এমন কি সনাতন পরম্পরা নিষ্ঠ সাধারন ভারতীয়ের কাছেও ধর্ম শব্দটির তাৎপর্য কখনই রিলিজিয়ানের সমান নয়। এই শব্দ দুটিকে একাসনে বসানর কৃতিত্ব ব্রিটিশ শাসিত কালো সাহেবদের।

রিলিজিওন --নিতান্তই সেমেটিক সংস্কৃতির অবদান। অন্যদিকে ধর্ম -- ভারতীয় সনাতন(অন্য অর্থে হিন্দু) কৃষ্টির ফসল। আদিতে রিলিজিওন খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাস বোঝাতে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে জরাথ্রুস্তবাদী,ইহুদি,মুসলিম ক্ষেত্রেও তা প্রযুক্ত হল, এবং তা খাপ খেয়ে গেল কারন এই সব কটি রিলিজিওনের উৎপত্তির ভূগোল ও সামাজিক রীতিনীতি মোটামুটি এক। এই রিলিজিওন গুলোকে একত্রে বিদ্বতজনেরা তাই সেমেটিক রিলিজিওন বলেন।

যে ল্যাটিন শব্দ হতে রেলিজিওন শব্দ সৃষ্ট ,সেই Religo সব্দের অর্থ ---বিশ্বাস বা প্রথা। সেই বিশ্বাস কিসের প্রতি?

১) বিশ্বের স্রষ্টা এক অতীন্দ্রিয় শক্তির প্রতি, ২)সেই শক্তি প্রেরিত কোন এক প্রচারক বা রসুলের প্রতি এবং ৩)সেই প্রচারকের দ্বারা প্রচারিত কোন দৈবী পুস্তকের প্রতি। এই ৩ টির কোন একটির প্রতি
বিন্দুমাত্র অবিশ্বাস বা অশ্রদ্ধা প্রকাশ করলে সে নাস্তিক। তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যু। এই রিলিজিওন গুলির আবির্ভাবের পর কম পক্ষে ৩০০০ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ খুন হয়েছে নাস্তিকতার কারনে। তাই নাস্তিক খ্রিস্টান , নাস্তিক ইহুদি বা নাস্তিক মুসলিম হয় না। এগুলো সোনার পাথর বাটি বা বন্ধ্যার পুত্রের মতই অবাস্তব।

ধর্ম ও রিলিজিয়নের ভেদ রিলিজিয়নগুলির মধ্যে জরাথ্রুস্তবাদীগন-এর আধ্যাত্মিক মত ভৌগলিক ভাবে সেমেটিক রিলিজিয়নের উৎপত্তি স্থলের অন্তর্গত হলেও ভাবগত ও সংস্কৃতি গত ভাবে সনাতন কৃষ্টির মুকুট স্বরুপ বেদ -এর ভাব ও ভাষার সাথে বহু অংশে এক। ঐতিহাসিকগণ অনেকেই এদের ভারতীয় বৈদিক জনগোষ্ঠীর শাখা বলে মনে করেন। তাই এই সম্প্রয়দায়কে রিলিজিওন-এর বর্গ থেকে বাদ দেয়া হল। এখন থেকে রিলিজিওন বলতে এই আলোচনায়
আমরা ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলামকে ধরব।
রিলিজিওন গুলি যে বিশ্ব স্রস্টার কথা বলে তিনি সাকার না নিরাকার আর তিনি এক না বহু তা নিয়ে সংশয় আছে, যদিও তারা দাবি করেন যে তাদের উপাস্য স্রষ্টা এক ও নিরাকার।তিনি যা -ই
হন না কেন, সেই স্রষ্টা একজন আধিপত্যকামি পুরুষ এবং নারী জাতির প্রতি খড়গ হস্ত।
এই রিলিজিয়নগুলির উপাস্য স্রষ্টা সর্বজনীন নন,তিনি সেই সেই সম্প্রয়দায়ের মানুষের জন্য আবির্ভূত হএছেন এবং তাঁর বিরোধী অন্য মানব গোষ্ঠীর ও তাদের উপাস্য দেবতা বা স্রষ্টার প্রতি তিনি ঈর্ষা কাতর নেতার মতই ক্ষিপ্ত। বিরোধী সম্প্রয়দায় ও তাদের স্রষ্টাকে ধংস করবার আদেশ রিলিজিয়ন গুলির উপাস্য বিশ্বস্রষ্টার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।

উদাহরনঃ
১) জিহভা বা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিশ্ব স্রস্টার আদেশ তাঁর অনুগামীদের প্রতি-
" তোমরা তাদের ( অ-ইহুদি,অ খ্রিস্টান জাতির ) পূজাবেদি ভেঙে ফেলবে, স্তম্ভ খণ্ড খণ্ড করবে ও সেখানকার সব দেব মূর্তি কেটে ফেলবে। তুমি অন্য দেবতার কাছে প্রনাম করবে না। ...কারন জেহভা হচ্ছেন ঈর্ষা কাতর বিশ্বস্রষ্টা । ''(বাইবেল,যাত্রা পুস্তক।৩৪ অধ্যায় , ১৩-১৪ বাণী)

২)আল্লাহ্ বা মুসলিমদের বিশ্ব স্রস্টার আদেশ তাঁর অনুগামীদের প্রতি -
"অতএব নিষিদ্ধ মাস যখন অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন অংশী বাদিদের (অ মুসলিমদের) যেখানে পাবে বধ করবে, তাদের বন্দী করবে, অবরোধ করবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে
তাদের জন্য ওঁত পেতে থাকবে।"(কোরান। সুরা ৯,আয়াত ১২)।

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ এইসব সহিংস, অনুদার ,বিভেদ মূলক , খণ্ডিত বোধকে তাদের জীবনের অবলম্বন করেছে এবং তাকেই অধ্যাত্ম বলে স্রদ্ধা নিবেদন করে এসেছে।যেটুকু শুভ বোধের কথা রিলিজিয়ন বলেছে তা রিলিজিয়নগুলির অনুগামীরা অনুসরন করতে প্রায়-ই ব্যর্থ হয়েছে।কারন শুভ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে বিশ্ব চৈতন্য দরকার সেই" ভূমা" -এর বোধ রিলিজিয়ন -এ নেই। ফলে বিশ্ব দিন দিন আরও বেশি রক্তস্রোতে প্লাবিত হয়ে চলেছে।

রবীন্দ্রনাথের কথায় --"দেবতার নামে এ যে শয়তান ভজা।" এই রিলিজিয়নগুলির বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেছিলেন ,সেই নিন্দিত ,নির্যাতিত নাস্তিকরাই বরং রিলিজিয়ন অধ্যুষিত অঞ্চলে মানবাধিকারকে স্থাপন করেছেন। সনাতন ভারতীয় দৃষ্টিতে তাঁরা নাস্তিক হলেও মহাত্মা। তাঁরা -ই যথার্থ "ধর্ম" পালন করেছেন। তাঁরা আমাদের প্রনম্য।

পূর্বে আমরা রিলিজিওনের যে সামান্য বৈশিষ্ট্য দেখেছি তা অনুদার,উগ্র ,মনুষ্যত্ব -বিরোধী এক অন্ধকার সময়ের দিকে পৃথিবীকে নিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট। এর সাথে ভারতের ঋষি -মুনি-সন্ত ও অবতারগন প্রচারিত "ধর্ম " -এর কোন সংযোগ নেই। রিলিজিওনের সাথে প্রাচ্যের অন্যান্য আধ্যাত্মিক দর্শন যথা-
জাপানী সিন্টো মত ,চীনা তাও ও কনফুসীয় মত প্রভৃতির -ও কোনও যোগাযোগ নেই। বরং এই মতগুলির সাথে ভারতে প্রচলিত "ধর্ম" -এর অল্প বিস্তর মিল আছে।

এবার জগতের সেই মহত্তম ,গভীরতম ও প্রাচীনতম আদর্শ তথা "ধর্ম" সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা আলোচনার চেষ্টা করব।

ধর্ম কিন্তু রিলিজিওনের মত পৃথিবীতে কোনও এক বিশেষ ঐতিহাসিক কালে(১৫০০ বা ২০০০ বছর আগে) , কোনও এক বিশেষ জাতির জন্য(ইসরাইল বা সামুদ জাতি) ,কোনও এক বিশেষ প্রফেটের( যীশু বা মহম্মদ) মাধ্যমে আবির্ভূত হয় নি। ঋষিপরম্পরা বিশ্বাস করে "ধর্ম" স্বয়ং পরমেশ্বর হতে আবির্ভূত হয়ে সৃষ্টির প্রারম্ভ হতে এখনও বর্তমান আছে এবং এ সৃষ্টি বিনষ্ট হবার পর, নতুন সৃষ্টিতেও একই থাকবে। এ তো গেল আস্তিকদের কথা। নাস্তিক ঐতিহাসিকগণ ধর্মের উদ্ভবকাল বা এর প্রবর্তক সম্পর্কে নীরব। কারন ইতিহাস জন্মের বহু আগে আগে ধর্ম আবির্ভূত হয়েছে, ঐতিহাসিক কালে তা আজও
বিদ্যমান আছে ও শাস্ত্র অনুযায়ী তা ভবিষ্যতেও থাকবে ।

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ --- এই তিন কালে অমর হবার জন্য ব্যাস প্রমুখ ঋষি গন "ধর্ম" শব্দের আগে একটি বিশেষণ যুক্ত করলেন। সেই বিশেষণটি হল-- "সনাতন" বা চিরস্থায়ী।
এই "সনাতন ধর্ম" শব্দটির সাথে ঋষি যুগের অবসানের বহু পরে' হিন্দু' শব্দটি যুক্ত হয়। সিন্ধু নদ বিধৌত অঞ্চলের মানুষদের চিহ্ণিত করতে এককালে বিদেশি আরব ও পারস্যের অধিবাসীরা হিন্দু শব্দটি বলতে আরম্ভ করে। পরে তা এই
উপমহাদেশে বসবাসকারী সকলকে বোঝাতে প্রযুক্ত হতে থাকে।

এমনকি ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধেও মুসলিম সমেত নানা জাতি -বর্ণ- মত- পথে বিশ্বাসী সনাতন ধর্ম ও তার শাখা স্বরূপ বৌদ্ধ
,শিখ, জৈন ভারতবাসীকে 'হিন্দু'
বলে উল্লেখ করা হত। ঐতিহাসিক কালে রচিত "বৃহস্পতি তন্ত্র'-এর একটি শ্লোকে 'হিন্দু' শব্দের আর এক বুৎপত্তি দেখান হয়েছে।
তন্ত্রকারের মতে, "হিমালয়ং সমারম্ভ্য যাবত ইন্দু সরোবরম /তং দেব নির্মিতং দেশং হিন্দুস্থানং প্রচকশ্যতে।"

অর্থাৎ, উত্তরে হিমালয় হতে দক্ষিনে ইন্দু বা দক্ষিন সমুদ্র অবধি ব্যাপ্ত ক্ষেত্রই হিন্দু ভূমি । এইভাবে আর একটি ভৌগলিক পরিচয়বাচক বিশেষণ "ধর্ম" শব্দের সাথে জুড়ে গিয়ে"ধর্ম" -এর প্রাচীন ধারনাটি "সনাতন হিন্দু ধর্ম" নামে পরিচিতি পেতে লাগলো ।

জয় হিন্দুরাষ্ট্র।
অখন্ড ভারত অমর রহে ।