Dey Subhrajit 's Album: Wall Photos

Photo 97 of 250 in Wall Photos

#ফিরোজ_গান্ধী_সন্মন্ধে_সংক্ষিপ্ত_ইতিহাস ✍️

ফিরোজ গান্ধী জন্ম,মৃত্যু, বিবাহ ও কর্মজীবন অদ্ভুত এক রহস্যে পরিপূর্ণ । ভারতের ইতিহাসে বলা হয়েছে যে ফিরোজ গান্ধী হল মহাত্মা গাঁধীর দত্তক পুত্র ও ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী। কিন্তু মহাত্মা গাঁধী কবে কোথায় তাকে দত্তক নিয়েছিলেন, তার কোন ঐতিহাসিক দলিল নেই। তাহলে ফিরোজ গান্ধীর আসল পরিচয় কি?

বেশিরভাগ ঐতিহাসিক দাবি করেন যে ফিরোজ গান্ধী বরুচ থেকে বোম্বে আসা এক পার্শি পরিবারে 1912 সালে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা ছিলেন Jehangir Ghandy (Not GANDHI) এবং মা ছিলেন Ratimai Ghandy । 1920 সালে তিনি তার মায়ের সাথে এলাহাবাদে এসে তার এক চিরকুমারী ডাক্তার আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন । তার দুভাই ও দুবোন বোম্বেতেই থাকেন।

আমেরিকাবাসি জনৈক অরবিন্দ ঘোষ তার গ্রন্থে দাবি করেন যে , ফিরোজের বাবা ছিলেন মঃ নবাব খান যিনি এলাহাবাদের রেডলাইট এলাকা মীরগঞ্জের এক মদ বিক্রেতা ছিলেন । এই নবাব খান এক পার্শি মহিলাকে ইসলামে দীক্ষিত করে বিয়ে করেছিলেন । 1951 সালে মুম্বই থেকে ফেরার পথে এই লেখক দুদিন এলাহাবাদে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে জানেন যে , স্কুলের খাতায় ফিরোজের পদবী ছিল ”খান”। তিনি আরও জানতে পারেন যে মঃ এসাক নামে এক ব্যক্তি তাকে সুন্নত করেছিল।

অপরদিকে ইন্দিরা গান্ধীর জীবনী লেখক ক্যাথরিন ফ্রাঙ্ক দাবি করেন যে, ফিরোজ এলাহাবাদের একজন চিরকুমারী ডাক্তারের কাছে প্রতিপালিত হন। ফিরোজ সম্ভবত তার অবৈধ সন্তান। ফ্রাঙ্কের মতে , ফিরোজের বায়োলজিক্যাল পিতা ছিলেন এলাহাবাদের এক প্রথিতযশা আইনজীবী যিনি জাতিতে পাঞ্জাবী ক্ষত্রী। এইভাবে ফিরোজের জন্ম নিয়ে পার্শি, মুসলিম ও ক্ষত্রি কানেকশন পাওয়া যায় । তবে তিনি যাই হোন না কেন, তিনি কোন অবস্থাতেই ”গান্ধী” ছিলেন না ।

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তার সম্পর্ক ও বিবাহও কম রহস্যজনক নয় । 1930 সালে তার সাক্ষাত হয় ইন্দিরার সাথে যখন কমলা নেহেরু তার কলেজের বাইরে পিকেটিং করছিলেন। তিনি এই ঘটনায় প্রভাবিত হয়ে ‘বানর সেনা” তে নাম লেখান। পরবর্তী সময়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান করেন। 1930 সালে তিনি লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সাথে প্রথমবারের মত জেলে যান।

1933 সালে তিনি ইন্দিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন । কিন্ত কমলা নেহেরু এই প্রস্তাব খারিজ করে দেন কারন ইন্দিরার বয়স ছিল তখন মাত্র 16 বছর । 1934 সালে কমলা নেহেরু হঠাৎ-ই অসুস্থ হলে, ফিরোজ তাকে লন্ডনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন । সেখানে সেবার ছলে ইন্দিরার সাথে তার সখ্যতা বাড়ে । 1942 সালে ইংল্যান্ডের এক স্বনামধন্য পত্রিকার মতে লন্ডনের এক মসজিদে তারা নিকা করেন । গঠনা জানতে পেরে মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধীর সাথে আলোচনা করে তাড়াহুড়ো করে বৈদিক রীতিতে বিয়ের সরঞ্জাম করে , তার ছবি ”আনন্দ ভবনে” প্রকাশ করেন ভারতীয়দের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য ।

নেহেরুর ব্যক্তিগত সচিব এম ও মাথাই, তার “Reminiscences of Nehru Age” (now banned) গ্রন্থে দাবি করেন যে , নেহেরু কিছু অবশ্যম্ভাবি কারনে এই বিয়ে মেনে নেন এবং বৈদিক রীতিতে বিয়ে করার অনুমতি দেন , এটা না জেনেই যে বৈদিক রীতিতে inter- religious marriage এর কোন প্রচলন নেই । তিনি আরো দাবি করেন যে , গান্ধীর পরামর্শে মতিলাল নেহেরুর সুপরিচিত Sir Sapru বোম্বাই এ এক এফিডেবিট দেন যাতে ফিরোজ ”খান” পদবী পাল্টে ”গান্ধী” পদবী নেন।

ইন্দিরা গান্ধীর জন্ম পরিচয় নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। কেউ কেউ দাবী করেন যে, ইন্দিরার আসল নাম ছিল Maimuna Begam। তিনি সারাজীবন (সিঁদুর শাখা ছাড়া ) মুসলিমের মতই জীবন যাপন করেন। একদা তিনি মাথাইকে বলেছিলেন “I hate Hindus. I will never marry a Hindu.” ইন্দিরা গান্ধী যদি মুসলিম না হতেন , তাহলে সৌদি আরবের সুলতান তাকে মক্কা ভ্রমণের অনুমতি দিয়েছিলেন কেন? কেনই বা আফগানিস্তান ভ্রমণের সময় তিনি বাবরের সমাধিতে একাই একঘন্টা ধরে বসেছিলেন ? কেনই বা গোহত্যা বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সাধুদের মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন ?

যাইহোক, তাদের বৈবাহিক জীবন সুখের ছিল না । বিবাহের ছয় মাসের মধ্যেই ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য ফিরোজ গান্ধীকে জেলে যেতে হয়েছিল । 1944 ও1946 সালে রাজীব ও সঞ্জয় নামে তাদের দুইটি ছেলে হয় । রাজীবের জন্মের পর থেকেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয় এবং তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন । ইন্দিরা গান্ধী নেহেরুর সাথে তিন মুর্তি হাউসে থাকতেন। সেখানে ফিরোজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয় ।

ইন্দিরা ফিরোজের এই অশান্তির কারণ ছিল ফিরোজের রাজনৈতিক মত ভিন্ন কর্মকান্ড । ফিরোজ গান্ধী 1952 সালে রায়বেরেলি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন । 1957 সালে তিনি পুন নির্বাচিত হন । 1958 সালে Haridas Mudra Scandal এর মত বিভিন্ন স্ক্যান্ডাল তুলে ধরে নেহেরু সরকারের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পোল খুলে দেন। নেহেরু গান্ধী pvt ltd(কংগ্রেস) এর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এ তিনিই ছিলেন প্রথম সৈনিক। এর ফলে তিনি গান্ধী পরিবারের গলার কাঁটায় পরিনত হন।

1958 সালেই হঠাৎ-ই তার হার্ট অ্যাটাক হয় । তখন ইন্দিরা তার বাবার সাথে সরকারি ভ্রমণে ভুটানে ছিলেন । তিনি সংবাদ পাওয়া মাত্রই কাশ্মীরে ফিরে আসেন তার সেবার জন্য । তারপর 1960 সালে দিল্লীতে মাত্র 47 বছর বয়সে দ্বিতীয়বার হার্টফেল করে মারা যান । মৃত্যুর পর বৈদিক মতে তার মৃতদেহ সৎকার করা হলেও , তার অস্থিভষ্ম গঙ্গায় বিসর্জন না দিয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল ।

তার মৃত্যু নিয়ে অনেকেই অনেক প্রশ্ন তোলেন । যাইহোক, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর মৃত্যুর মত কয়েকটা বিষয় সেই রহস্যকে আরো ঘনীভূত করে