সরকারকে প্রশ্ন করা মানেই দেশদ্রোহীতা নয়।যদি এই ধরনের কোন চিন্তা ভাবনা আমাদের মাথায় থাকে,তাহলে তা দূর করা উচিত।কোন গনতান্ত্রিক দেশে সরকারকে প্রশ্ন করার অর্থই হল,সরকারের নিজেকে আরো স্বচ্ছ প্রমাণ করার আরো একটি সুযোগ।তাই যদি বিরোধীরা সরকারকে প্রশ্ন করে,তাহলে সেটা সরকারের দেশবাসীর কাছে নিজেদের চরিত্র স্বচ্ছ প্রমাণ করার সুযোগ হিসাবে নেওয়া উচিত।কিন্তু সরকার যদি তখন প্রশ্ন করেছে বলে বিরোধীদের দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া শুরু করে,তখন তা জনগণের কাছে সরকারের ছবি খারাপ করে।হ্যা এটা সত্যি যে,আমাদের দেশে আজকাল অধিকাংশ সময়ে সরকার কে করা প্রশ্নের পিছনে লুকিয়ে থাকে নোংরা এজেন্ডা।কিন্তু সেটা সরকারকেই সামলাতে হবে।জনগণ তাদের ভোট দিয়েছে দেশ চালানোর জন্য,আর দেশ চালানোর পথ মসৃণ হবে না,এটা তো সবারই জানা।
গতকাল যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সর্বদলীয় বৈঠকে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চলা সমস্ত ঘটনার বিবরণ দেশবাসীর সাথে ভাগ করেছেন।তখন তিনি যে ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন,তা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর চীনের বিরুদ্ধে কোন প্রধানমন্ত্রী করতে পেরেছেন,তা আমার মনে পরছে না।তিনি বৈঠকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে,চীন গালওয়ানের এক ইঞ্চি জমি দখল করতে পারেনি (বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার পর)।ভারতীয় জওয়ানরা বীরগতিপ্রাপ্ত হয়েছেন ঠিকই,কিন্তু তার সাথে সাথে চীনকে কঠিন শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিভিন্ন গুজব,তথাকথিত সামরিক বিশ্লেষণ এর অন্ধকার দেশবাসীর মন থেকে সরে যায়।কিন্তু গুজব কারী ও তথাকথিত সামরিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এমন একটি অসঙ্গতি ধরে ফেলে যে,সেটি নিয়ে আবারো গুজব ছড়ানো শুরু হয়।ব্যাপারটি হল প্রধানমন্ত্রী কালকে বলেছেন যে,কেউ (চীনারা)LAC অতিক্রম করে নি আর আমাদের এক ইঞ্চি জমিও নিতে পারে নি।এবার তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে,তাহলে আমাদের কুড়ি জন সেনা বীরগতিপ্রাপ্ত হলেন কি করে?তারা নিহত হলেন কোথায়?যদি বলি হাতাহাতিটা হয়েছে LAC এর ওপাশে ,তাহলে তো চীনের করা অভিযোগ সঠিক হয়ে যায়,যেখানে তারা বলছে ভারতীয় আর্মি LAC অতিক্রম করে প্রথমে চীনা সেনাদের ওপর আঘাত করে।আর যদি বলি হাতাহাতিটা LAC এর এপাশে হয়েছে,সেক্ষেত্রে তো প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্য পরস্পরবিরোধী হয়ে যাবে।
আর এই ব্যাপারটাই ধরে নেয় ভারতীয় গুজব ব্রিগেড।তারা আবারো একটি সুযোগ পেয়ে ভারত সরকারের ওপর নোংরা আক্রমণ চালানো শুরু করে দেশের এরকম পরিস্থিতিতেও।যাই হোক আমার মনে হয় এই সুযোগ সরকার নিজেই গুজব ব্রিগেডকে এই সুযোগ করে দিয়েছে।যাই হোক গুজব বাহিনীর দৌলতে দেশবাসী আরো একবার যখন ভ্রমিত হয়ে পরে,তখন পুনরায় সরকারকে মাঠে নামতে হয়।আজ প্রধানমন্ত্রীর অফিস একটি নোটিশ জারি করেছে এবং সেখানে স্পস্ট বলা হয়েছে যে :--
" যে স্থানে দুই দেশের আর্মির মধ্যে সংঘাত হয়,সেটি LAC এর একটি বিবাদপূর্ণ অমিমাংসিত এলাকা।২০১৩ এর মনমোহন সরকারের করা চুক্তি অনুসারে LAC এর ওপরে এই ধরনের বিবাদ পূর্ন এলাকায় কোন দেশ স্থায়ী স্থাপনা করতে পারবে না এবং রাতের অন্ধকারে কোন কার্যক্রম চালাতে পারবে না।চীনা বাহিনী গালোয়ানের ঐ অঞ্চলের LAC এর ঐ বিবাদপূর্ণ অংশ জুড়ে যখন স্থায়ী পরিকাঠামো বানাতে যায়,তখন সেখানে ভারতীয় আর্মি গিয়ে বাধা দেয়,আর যার ফলে এই সংঘাত।ভারত কখনোই একতরফা আঞ্চলিক পরিবর্তন মেনে নেবে না LAC তে।ভারতে বর্তমানে যে রাজনৈতিক মানচিত্র রয়েছে,ভারত সরকার সেটাকেই নিজের ভূমি মানে।আর সেক্ষেত্রে চীন প্রায় ছয় দশক ধরে ভারতের ৪৩,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা (আকসাই চীন) দখল করে বসে আছে।"
ভারত সরকারের এই বক্তব্যের পরে আবারো গুজব ব্রিগেড দের ভন্ডামি দেশবাসীর চোখে ধরা পরে।কিন্তু আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি-- ভারত সরকার যখন গতকালই সামগ্রিক বিষয়ের আলোকপাত করেছিল,তখনই ব্যাপারটির ১০০% সঠিক ভাবে করা উচিত ছিল,যেটা তারা করতে পারেনি।আর তাই দ্বিতীয় বার তাদের অফিসিয়াল বক্তব্য রাখতে হয়। এর মধ্যে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং পূর্ব সেনাপ্রধান জেনারেল ভি.কে সিং লাইভ টি.ভি শো এ বলেছেন যে -- চীনের চল্লিশাধিক সেনা মারা গেছে এবং আমরা চীনের অনেক সেনাকেই আটক করেছিলাম,যাদের পরবর্তীতে হস্তান্তর করা হয়েছে।এবার ব্যাপার হল,এই জিনিস গুলি ন্যাশনাল মিডিয়ায় বলা হলেও,কোন সরকারি প্রতিনিধি সরাসরি এব্যাপারে কিছু বলেননি।আর আর সেক্ষেত্রে জেনারেল ভি.কে সিং এর এই মন্তব্য বিরাট গুরুত্বপূর্ণ।
সেই দিন রাতে কি হয়েছিল তা তো আপনারা জেনেই গিয়েছেন,কিন্তু তার সাথে সাথে আরো কিছু নতুন তথ্য জানুন -- ' চীনারা যখন পেরেক যুক্ত লোহার রড দিয়ে ভারতীয় বাহিনীর ওপর হামলা করে আর তার পর একটা সময় ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডিং অফিসার বীরগতিপ্রাপ্ত হন,তখন ভারতীয় সেনাদের মধ্যে আদিম হিংস্রতা জেগে ওঠে।যে বিহার রেজিমেন্ট এর জওয়ানরা সেখানে ছিল,তাদের মধ্যে অনেকে ঘাতক বাহিনীর অংশ ছিল।তারা তখন বেয়োনেট,পাথর ,ডান্ডা আর খালি হাত দিয়েই আদিম লড়াই শুরু করে।আর পাল্টা ঐ ধরনের আক্রমণের ফলে অন্তত আঠারো জন চীনা সৈনিক গলা বা ঘাড় ভেঙ্গেই মারা যায়,তাদের অনেকের মাথা ধর থেকে প্রায় আলাদা ছিল।চীনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়,যেটা চল্লিশাধিক।যখন পরিস্থিতি সামান্য হয়,তখন পরিবেশ ছিল ভয়াবহ।ভারতের কুড়ি জন নিহত হলেও ,চীনাদের লাশ নেবার মতো সৈনিক প্রথমে সেখানে ছিলনা,পরে হেলিকপ্টার ও উদ্ধারকারী টিম এসে সেখান থেকে তাদের নিয়ে যায়।
এখনো পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে আমাদের যা যা প্রস্তুতি রয়েছে :--
#আর্মি:
১. তিন ডিভিশন আর্মি লাদাখে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।প্রতি ডিভিশনে ১৫০০০ সেনা।যারা প্রত্যকে এক একজন সুদক্ষ পর্বতারোহী।
২. লাদাখে অন্তত ৩০০ টি মেইন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক ও প্রায় একই সংখ্যক BMP-2 ফরোয়ার্ড পজিশন এ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
৩. প্রায় আট রেজিমেন্ট বিভিন্ন আর্টিলারি প্রস্তুত রয়েছে।
৪. তাছাড়া সমগ্র চীন সীমান্তে অন্য ট্রুপস দের হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।
#এয়ারফোর্স:
লাদাখের ফরোয়ার্ড বেস এ SU-30 MKI , MIG-29 UPG , MIRAGE-2000 , JAGUAR এর মতো ফাইটার জেট মোতায়েন রয়েছে।নতুন অ্যাটাক হেলিকপ্টার অ্যাপাচি , কার্গো হেলিকপ্টার চিনুক উপস্থিত রয়েছে।যেকোন পরিস্থিতি তে সুপার হারকিউলিস বিমান বহরকে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তাছাড়া সার্ভিল্যান্স মিশনের জন্য লংরেঞ্জ ড্রোন ও P-8I কে কাজে লাগানো হচ্ছে।
#নৌবাহিনী:
আজকের ফোর্বস এর একটি রিপোর্ট এ দেখা যাচ্ছে ভারত আন্দামান এ নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন চক্র কে মোতায়েন করে রেখেছে।তাছাড়া মালাক্কা প্রানালীতে চীনকে আটকে দেওয়ার জন্য নৌবাহিনীর ফ্রন্ট লাইন ডেসট্রয়ার ও ফ্রীগেট দের ঐ অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে।বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রায় সমস্ত যুদ্ধ জাহাজ সমুদ্রে অবস্থান করছে।
আপনাদের একটা কথা বুঝতে হবে,আর সেটা হল ভারত ভাগ্যদোষে এমন দুই প্রতিবেশী পেয়েছে,যাদের সাথে শত চেষ্টা করলেও সুসম্পর্ক তৈরী হবে না।একটা হল পাকিস্তান - উগ্র ইসলামিক মানসিকতা সম্পন্ন জঙ্গি দেশ,অপরটা হল কমিউনিস্ট চীন।ভাবধারাতেই আমাদের আর এদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে।তাই এদের সাথে সীমান্ত বিবাদ সর্বদা থাকবে।কিন্তু দেশ যখন এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে,তখন আমাদের উচিত দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সরকারের পাশে থাকা এবং আমাদের সেনাবলের মনোবল বৃদ্ধি করা।
#KNIGHT
Tagged: