samarendra aditya 's Album: Wall Photos

Photo 2 of 36 in Wall Photos

৩০মে, ১৯৯০

অনিতা দেওয়ান (ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট এক্সটেনশন মিডিয়া অফিসার), উমা ঘোষ (সিনিয়র অফিসার, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর), রেনু ঘোষ (ইউনিসেফ এবং হু প্রতিনিধি, দিল্লী), অবনী নাইয়া (গাড়িচালক)। - নামগুলো শুনেছেন? এরা কারা জানেন?

জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে ৩০ বছর আগের এক অভিশপ্ত ৩০শে মে তে। পশ্চিমবঙ্গে তখন বামফ্রন্টের সরকার। সর্বহারার মহান নেতা কমরেড জ্যোতি বসু রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী। গর্বের ৩৪ এর স্বর্ণযুগ।

যাইহোক, মূল ঘটনায় আসা যাক,

১৯৯০ সালের ৩০ মে। গোসাবায় একটি টীকাকরণ কর্মসূচি সেরে তিন জন সরকারি হেলথ অফিসার ফিরছিলেন কোলকাতায় । সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ যখন তারা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের কাছে বানতলায় পৌঁছোন তখন ৪-৫ জন যুবক স্থানীয় সিপিআই (এম) পার্টি অফিসের কাছে তাদের গাড়ি থামাতে বাধ্য করে। অসদুদ্দেশ্য বুঝে ড্রাইভার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গাড়িটা উল্টে যায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। ইতিমধ্যে আরও ১০-১২ জনের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বার করে আহত আধিকারিকদের এবং গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ড্রাইভার অবনী নাইয়া তাদের বাধা দিতে চেষ্টা করেন। শাস্তিস্বরুপ কমরেডরা তাঁর পুরুষাঙ্গটি পিষে দিয়েছিল। অবনী নাইয়াকে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রশিক্ষণরত স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ বিশ্বনাথ কাহালি তার অটোপসি করেছিলেন। তার দেহে ভারী অস্ত্রের ৪৩টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ১৯৯০ সালের ৪ জুন, সকাল ৫টা ৪০ মিনিটে তিনি মারা যান।

এতো গেল অবনী নাইয়ার কথা। বাকিদের কি পরিনতি হয়েছিল জানেন? কাছের একটি ধানক্ষেতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে কমরেডরা তাদের প্রত্যেককে গণধর্ষণ করে। একজন আধিকারিক বাধা দেওয়ায় ধর্ষকরা তাকে হত্যা করে। যদিও ঘটনার প্রায় পাঁচঘন্টা পর রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ পুলিশ গিয়ে আধিকারিকদের সম্পুর্ন নগ্ন দেহ উদ্ধার করে ক্যালকাটা ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজের আপদকালীন বিভাগে ভর্তি করার পর প্রথমে ডাক্তাররাও প্রত্যেককেই মৃত ভেবেছিলেন। কিন্তু দু’জন তখনও জীবিত ছিলেন। তাদের চিকিৎসা শুরু হয়। এদিকে অনিতা দেওয়ানের মৃতদেহ পরীক্ষা করছিলেন যে মহিলা ডাক্তার, তিনি ঘটনার বীভৎসতায় চিৎকার করে উঠে জ্ঞান হারান। অনিতা দেওয়ানের যোনির ভেতরে পাক্কা ১ ফুট লম্বা একটি ধাতব টর্চ দেখতে পেয়েছিলেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা আধিকারিকদের শিশুপাচারকারী মনে করে আক্রমণ করেছিল। মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ঘটনার প্রসঙ্গে বলেছিলেন “এমন টা তো হয়েই থাকে”

কিন্তু কেন ঘটেছিল বানতলা গণধর্ষন ও হত্যা? এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডি. বন্দ্যোপধ্যায় তার সাথে সুমন্ত ব্যানার্জীর কথোপকথনে জানিয়েছিলেন গ্রামীন মানুষের সাহায্যের জন্য পাঠানো ইউনিসেফের অর্থ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সি পি এম পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলো ব্যাপকভাবে নয়ছয় করেছিল। অনিতা দেওয়ান তা ধরে ফেলেছিলেন। প্রামাণ্য তথ্য সিজ করেন। গোসাবা টীকাকরন কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে আক্রমণ হয় তার ওপর কমিউনিস্ট বাহিনীর দ্বারা। তথ্য প্রমান জ্বলে গেছিল গাড়ির সাথেই। আর নিজের সন্মান ও জীবন দিয়ে অনিতা দেওয়ান মূল্য চুকিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির দূর্নীতি প্রকাশের চেষ্টা করার অপরাধের।

আজ সেই ৩০শে মে। আজও সেই সমস্ত অপরাধীদের শাস্তির অপেক্ষায় অনিতা দেওয়ানের আত্মা। শুধু ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খচিত হয়ে রয়ে গেছে প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সেই ঐতিহাসিক উক্তি। - “এমন টা তো হয়েই থাকে”

(Collected)