Subhankar Bakuli 's Album: Wall Photos

Photo 45 of 259 in Wall Photos

পৃথিবীর যে কোন সমাজ পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের মত নির্যাতনের শিকার হলে তীব্র প্রতিবাদ হত , সোচ্চার হত ।

প্রায় সমস্ত গনহত্যা বা নির্যাতনের কিন্তু সোচ্চারে প্রতিবাদ হয় বা হয়েছে -- ইহুদি গনহত্যা , সোভিয়েত জমানায় অঙ্গরাজ্যগুলোতে গনহত্যা , ১৯১৫-১৬ সালে তুর্কিতে মুসলিমদের হাতে আর্মেনিয়ান খ্রীষ্টানদের গনহত্যা , হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণকায়দের ওপর শ্বেতকায়দের অত্যাচার ।
হয়নি কেবল পূর্ববঙ্গের হিন্দুদের বেলায় । আর এটা ভূলিয়ে দেবার জন্য যথাসম্ভব করা প্রয়োজন তা করেছে বামেরা । অথচ কি আশ্চর্য দেখুন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যারা কলা, বিজ্ঞান , সাহিত্য , চিকিৎসা , আইন, সঙ্গীত, খেলাধূলা, রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের অন্তত পক্ষে ষাট শতাংশ পূর্ববঙ্গের । আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আটজন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে পাঁচজন পূর্ববঙ্গীয় -- প্রফুল্ল ঘোষ, প্রফুল্ল সেন, সিদ্ধার্থশংকর রায়, জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । বামদলগুলোর সিংহভাগ নেতা-কর্মী প্রমোদ দাশগুপ্ত, শৈলেন দাশগুপ্ত ,প্রশান্ত শূর, সুভাষ চক্রবর্তী প্রমুখেরা পূর্ববঙ্গীয় ।

বাজার ঘুরলে দেখবেন উদ্বাস্তু হিন্দুদের নিয়ে শয়ে শয়ে বই আছে , লিখেছেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমরেশ বসু , সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ইত্যাদিরা । এই বইগুলোর কিন্তু একটিই সুর -- পূর্ববঙ্গের হিন্দুরা বাস্তুহারা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে কি অবর্ননীয় দূর্দশায় জীবন কাটাতে হয়েছে তার বর্ননা । কোথাও বলা নেই যে কেন তাঁদের আসতে হয়েছিল -- বলা নই অত্যাচার আর নির্যাতনের কথা ।

আর এই চেপে যাওয়ার ব্যাপারে বদমাইশিতে সম্ভবত শ্রেষ্ঠত্ব করেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । আদ্যন্ত ধান্ধাবাজ একটি তৃতীয় শ্রেনীর লেখক যিনি শুধু সরকারের বদান্যতায় আজ নামজাদা , নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চিরটাকাল করে এসেছেন হিন্দুদের ছোট করে মুসলিমদের বড় করে দেখাতে ।

দেশ পত্রিকায় ১৯৭৮ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যকীর্তি-বিষয়ক একটা ধারাবাহিক রচনায় হাত দেন সুনীল। সেখানে বঙ্কিম-রচনার এত তীব্র সমালোচনা শুরু করেছিলেন যে, জনমতের চাপে সে-লেখা বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। প্রায় বছর দু’য়ের ব্যবধানে কৃত্তিবাস পত্রিকায় তিনি সেটি কিঞ্চিৎ দায়সারা ভাবে শেষ করেন, কিন্তু সমালোচনার ধার তখনও একই রকম।

একটু সেই তীব্র সমালোচনার ধরনটি দেখে নেওয়া যাক ---

১) “…বাংলায় সুদীর্ঘকালের গুজব এই যে, ঔপন্যাসিক হিসেবে বঙ্কিম এখনও মহত্তম। …তাহলে আমি এগুলো কী পড়লাম?… বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলি এত খারাপ? এ কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায়?” (দেশ)

২) “…বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর একটি উপন্যাসেও আমাকে তৃপ্ত করতে পারলেন না। তাঁর প্রত্যেকটি কাহিনী কৃত্রিম এবং উদ্ভট— যেন মানসচক্ষে তিনি হিন্দি সিনেমা নামক একটা জিনিসের কথা জানতে পেরে তারই কাহিনী বানিয়ে গেছেন।” ( দেশ)

৩) “তাঁর প্রথমদিককার উপন্যাসগুলির কাহিনী অতি কৃত্রিম ও দুর্বল, চরিত্রগুলি অবাস্তব শুধু নয়, উদ্ভট; পরে ক্রমশ কাহিনির বাঁধুনিতে তাঁর দক্ষতা জন্মায়, ঘটনার গতি আরও রোমহর্ষক হয় বটে কিন্তু শেষের দিকে উপন্যাসের মধ্যে নানারকম বক্তব্য প্রচারের অনাবশ্যক ঝোঁকও দেখা দেয়। এই ঝোঁক রসহানিকর এবং তাঁর বক্তব্যগুলি প্রতিক্রিয়াশীল।” (কৃত্তিবাস)

বঙ্কিমচন্দ্রের ওপর সেই সময়কার সুনীলের যেন এক জাতক্রোধ ছিল বলে মনে হয়, এই নিবন্ধটি পড়লে। কাহিনিকার হিসাবে তো বটেই, এমনকী ভাষাশিল্পী হিসেবেও বঙ্কিমকে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি!

এই ‘ক্রোধ’ এমনই তীব্র যে, ঐ একই নিবন্ধে কয়েক অনুচ্ছেদের ব্যবধানে সুনীল গাঙ্গুলি শুধু নান্দনিক সমালোচনা করেই থেমে থাকেন নি তাঁর স্বরে উঠে এসেছে ‘আইডিওলজিক্যাল পারশিয়ালিটি’— যেন যে করেই হোক মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা ভূলিয়ে দেবার ব্রত নিয়ে নেমেছিলেন । দেখা যাক কয়েকটি নমুনা—

১) “হিন্দু-মুসলমানের প্রসঙ্গ এলেই তিনি (বঙ্কিম) হয়ে উঠতেন ঘোরতর সাম্প্রদায়িক। …সাহিত্যের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা অবলম্বনে তিনি বাঙালি হিন্দু লেখকদের মধ্যে প্রথম এবং অদ্বিতীয়।” (দেশ)

২) “বঙ্কিমচন্দ্র ঋষিপ্রতিম, তিনি স্বদেশীমন্ত্রের উদ্গাতা… তা সত্যমিথ্যা যাই হোক, …উপন্যাস লিখে বঙ্কিম আমাদের দেশ বা সমাজের কোনও উপকার করে গেছেন এ-কথা মেনে নিতে আমি রাজি নই। (কৃত্তিবাস)

৩) “উপন্যাসে তিনি ঘোরতর সনাতনপন্থী। বিদ্যাসাগরের মতোই ব্রাহ্মসমাজকেও যে তিনি মনপ্রাণ দিয়ে অপছন্দ করতেন তা সুবিদিত। বহুবিবাহের নির্লজ্জ সমর্থন করেছেন বঙ্কিম তাঁর ‘দেবী চৌধুরানী’ ও ‘সীতারাম’ উপন্যাসে।” ( কৃত্তিবাস)

৪) “যে-মানসিকতার ফলে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করা হল, তার উৎপত্তির অন্যতম প্রধান কারণ ‘আনন্দমঠে’র মতো উপন্যাসের রচনা এবং এই উপন্যাসের লেখককে ‘স্বদেশী মন্ত্রের উদ্গাতা’ হিসেবে গণ্য করা। …বাঙালি জাতি ও তার মাতৃভূমিকে দ্বিখণ্ড করার জন্য কাঁঠালপাড়া-নিবাসী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কি কিছুটা পরিমাণে দায়ী নন?”

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন , জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অকৃত্রিম ধান্দাবাজির খ্যাতি অক্ষুন্ন রেখে -- তবে তাঁর আত্মার প্রতি প্রশ্ন রাখা যেতেই পারে - বাপু হে ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর থেকে বিতারিত হওয়ার ঘটনাটি যেন কি ছিল ?

অবশ্য সুনীল নিজেই এর আংশিক উত্তর দিয়ে গিয়েছিলেন জনৈক তুষার ভট্টাচার্যের আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা চিঠির ( সেপ্টেম্বর ৯, ২০০০ ) উত্তরে । তুষারবাবুর চিঠিটি দেওয়ার প্রেক্ষিত ছিল দেশভাগ নিয়ে ঐ পত্রিকাতেই ২০শে আগস্ট , ২০০০ তারিখে প্রকাশিত শুভরঞ্জন দাশগুপ্তের একটি রচনা , ‘ না আমরা ভূলিনি ’ । সুনীল বাবু চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ধৃতি করেছিলেন , “ এই সব নিয়ে লিখলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হতে পারে । ”

আদ্যন্ত নিন্মরুচির এই মানুষটি আসলে খরগহস্ত হয়ে উঠতেন যখনই তাঁর স্বার্থসিদ্ধির জায়গাটিতে হাত পড়ত । ১৯৭৮এর বিভাব পত্রিকায় ওনার সমালোচক এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর উদ্দেশ্যও লিখেছিলেন -- “বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে এখন ভাদ্রমাস, এইসময় কোকিল ডাকে না, কারণ এইসময় অন্য একটি প্রাণী বড়ো গোলমাল করে।”

অথচ বামেদের প্রচারগুনে উনি তো প্রায় রবীন্দ্র সমতুল্য ।