Tapash Hindu's Album: Wall Photos

Photo 14 of 15 in Wall Photos

সনাতন ধর্মের #আদি_ধর্মগ্রন্থ_পবিত্র_বেদ ও হিন্দুধর্ম কি?

#হিন্দুধর্ম কি?
প্রাচীনকালের ধর্ম যাকে আর্যধর্ম বা সনাতনধর্ম বলা হতো, তারই বর্তমান নাম— হিন্দুধর্ম। 'সনাতন' শব্দের অর্থ চিরন্তন বা অবিনশ্বর; অর্থাৎ যা কখনো নষ্ট হয় না তাই নামই সনাতন। যিনি বৈদিক ধর্ম-সংস্কৃতি ও বৈদিক-আদর্শ স্বীকার করেন, তিনিই হিন্দু; অর্থাৎ যিনি পবিত্র বেদকে মানেন তিনিই হিন্দু। সনাতন ধর্মের মূলভিত্তি বেদ আদি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। তাই বেদ সম্বন্ধে কয়েকটি বিশেষ কথা আমাদের সকলেরই জানা দরকার।

সনাতন #ধর্মের আদি ধর্মগ্রন্থ বেদ,
বেদ শব্দের অর্থ— 'সনাতন জ্ঞানের ভাণ্ডার'। ইহা কোনো পুরুষকৃত নহে; অর্থাৎ কোনো মানুষ এটা রচনা করেন নাই। বেদ সত্য বলেই ইহার কোনো নির্মাতা নাই; যেমন দুইয়ে চার হয়, ইহা গণিতের সত্য এ সত্য কেহ তৈরি করে নাই; বেদ সেরূপ সত্য। সত্য কোন স্থান, কাল বা ব্যক্তির অধীন নহে; নিউটন প্রাকৃতিক নিয়মগুলি (Laws of Nature)- এর স্রষ্টা নহে; তিনি দ্রষ্টা ও প্রচারক মাত্র সেরূপ আর্য ঋষিগণ বেদমন্ত্রের কর্তা বা স্রষ্টা নহে; তাঁরা দ্রষ্টা মাত্র।

সমগ্র বেদের মন্ত্রসংখ্যা ২০,৩৭৯; তার মধ্যে ঋগ্বেদের মন্ত্র সংখ্যা ১০,৫৫২, সামবেদের মন্ত্র সংখ্যা ১,৮৭৫, (তার মধ্যে ১,৮০০ টি ঋগ্বেদের মন্ত্র), যজুর্বেদের মন্ত্র সংখ্যা ১,৯৭৫ (তার মধ্যে ১,৯০০ টি ঋগ্বেদের মন্ত্র), অথর্ববেদের মন্ত্র সংখ্যা ৫,৯৭৭ টি (তার মধ্যে ১,২০০ টি ঋগ্বেদের মন্ত্র)।

১) ঋগ্বেদ— প্রধানত সকাম প্রার্থনা, মন্ত্রগুলি ছন্দোবদ্ধ।
২) সামবেদ— সঙ্গীত প্রধান প্রার্থনা; গানের মাধ্যমে প্রার্থনা।
৩) যজুর্বেদ— শুক্ল যজুর্বেদ সকাম প্রার্থনা; যজুর্বেদ যজ্ঞ সম্পাদনের উপকরণ ও পদ্ধতি বর্ণনা মন্ত্রগুলি গদ্যে রচিত।
৪) অথর্ববেদ— আয়ুর্বেদ; প্রধানত যাদু বা উচাটন জাতীয় মন্ত্র। অথর্ববেদ আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষ মন্ত্রগুলো ছন্দে রচিত।

সমগ্র বেদের অধিকাংশ ঋক্ বা মন্ত্রই সকাম প্রার্থনা; ঋগ্বেদও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন দেবতার কাছে সোমরস (তৎকালীন যজ্ঞের অপরিহার্য উপাদান) নিবেদন করা হয়েছে অন্ন, বৃষ্টি, গো, অশ্ব, সুবর্ণ, দীর্ঘায়ু, পাপ-মোচন, শত্রু-বিনাশ, ধন, পুত্র- পৌত্রাদি এমনকি সুন্দরী স্ত্রী লাভের জন্য।

বেদের ঋষিরা ছিলেন গীতার ভাষায় "আর্ত, জিজ্ঞাসু, ও অর্থাথী শ্রেণীর (গীতা, ৭/১৬)।

প্রত্যেকটি বেদের তিনটি অংশ— মন্ত্র, ব্রাহ্মণ, উপনিষদ। মন্ত্রগুলির সংগ্রহকে সংহিতা বলে, যথা— ঋগ্বেদ সংহিতা, সামবেদ সংহিতা, যজুর্বেদ সংহিতা, অথর্ববেদ সংহিতা, প্রত্যেকটি বেদের সংহিতা একটি কিন্তু ব্রাহ্মণ ও উপনিষদ অনেক এবং ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এই তিনটিকে ত্রয়ী বলা হয়। বেদের মন্ত্রগুলি বেশ কঠিন; বেদের ব্যাখ্যার বই লিখেছেন ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা মন্ত্র আর ব্রাহ্মণ নিয়েই বেদ। প্রত্যেকটি বেদের একাধিক ব্রাহ্মণ আছে। ব্রাহ্মণ ব্যাখ্যার মধ্যে প্রধানত দুই প্রকার মতভেদ আছে। বেদের প্রধান করণীয় যজ্ঞ; যজ্ঞের অর্থ দুই রকম হয়— দ্রব্য, যজ্ঞ ও জ্ঞান যজ্ঞ। উদাহরণ দিলে ব্যাপারটি পরিষ্কার বুঝা যাবে যজ্ঞে কাষ্ঠ লাগে, অগ্নি লাগে, আর লাগে ঘৃতাহুতি। একা শ্রেণীর পণ্ডিতগণ এই দ্রব্যগুলির কথা, দ্রব্য স্বরূপেই বলেছেন।

এক শ্রেণীর #পণ্ডিত বলেছেন,
দ্রব্যগুলির বাহ্য অর্থ কিছু নাই, আন্তর বক্তব্য এইরূপ— বাক্য হচ্ছে কাষ্ঠ, শ্রদ্ধা হচ্ছে— ঘৃত এবং সত্য হচ্ছে আহূতি। দ্রব্যময় যজ্ঞ যাঁদের তাঁরা সমাজের মধ্যে থাকতেন,নআর জ্ঞানময় ব্যাখ্যা যাঁদের তাঁরা লোকালয়ে না থেকে অরণ্যে থাকতেন; যাঁরা বেদের জ্ঞানময় আলোচনা করতেন তাঁদের গ্রন্থের নাম আরণ্যক তথা উপনিষদ। কোন কোন ব্রাহ্মণে দুটি, কোন কোন ব্রাহ্মণে তিনটি, চারটি বা ততোধিক উপনিষদ আছে।

উপনিষদ এর অর্থ গুপ্ত বিদ্যা; তাই উপনিষদের শব্দের অর্থ হচ্ছে— যে বিদ্যা মুমুক্ষু সাধকগণকে সত্ত্বের নিশ্চিতরূপে ব্রহ্ম প্রাপ্তি ঘটায়। অথবা এ সংসার বন্ধন নিশ্চিতরূপে শিথিল করে বিনাশ করে তাই উপনিষদ বা ব্রহ্মবিদ্যা বলা হয়।

ব্রহ্ম #প্রাপ্তি হয় কেন?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—

ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মামনুস্মরন্ ।
যঃ প্রয়াতি ত্যজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্ ।।
(গীতা, ৮/১৩)

অনুবাদঃ— যে ব্যক্তি 'ওঁ' এই এক অক্ষররূপে আমাকে চিন্তা করতঃ শরীরকে ত্যাগ করে যায় ব্রহ্মকে উচ্চারণ করতঃ (এবং তার অর্থস্বরূপে) সেই ব্যক্তির পরম গতিকে প্রাপ্ত হয়।

#চৈতন্যময় সত্ত্বা যাকে ব্রহ্ম বলা হয়,
ওঁ (পরমব্রহ্ম) এই অর্থেই (অউম) জগৎ যাঁর দ্বারা দীপ্ত হয় এই অর্থে ব্রহ্ম। ব্রহ্ম যিনি জগৎ সৃষ্টি ও রক্ষা করে আছেন, তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত (চিরস্থায়ী), সর্বদা নিত্য। এই শরীর আত্মা ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় তিনি এক সত্ত্বাধিকারী পরমব্রহ্ম এই হলো চৈতন্যময় সত্ত্বা আমাদের মাঝে আছেন সার্বক্ষণিক দৃশ্য ও দৃশ্যমান হয়ে সাকার ও নিরাকার হতে বিরাজিত।

পবিত্র বেদের মূল #সিদ্ধান্ত
সনাতন ধর্মে একটি সচ্চিদানন্দ পরম সত্তা একাকী ছিলেন। তিনি বহু হতে ইচ্ছা করলেন এবং জীব ও জগৎরূপে বহু হলেন। বহু হয়েও তিনি নিজ স্বরূপে পূর্ণ অখণ্ডরূপে বিরাজমান আছেন।

আদি #ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বেদ বলেছেন,
তিনি পূর্ণ; তাহা হতে প্রকাশিত নিখিল জগৎও পূর্ণ; পূর্ণ হতে পূর্ণ লইলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে।

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।
পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ৫/১/১)

উহা (পরব্রহ্ম) পূর্ণ, ইহা হতে প্রকাশিত এ জগৎও পূর্ণ। পূর্ণব্রহ্ম হতে পূর্ণ সৃষ্টি হলেও পূর্ণব্রহ্মের পূর্ণত্বই অবশিষ্ট থাকে।অর্থাৎ পূর্ণ হতে পূর্ণ নিলে পূর্ণই অবশিষ্ট থাকে। আমাদের আধ্যাত্মিক দুঃখ (শারীরিক ও মানসিক দুঃখ), আধিদৈবিক দুঃখ (দৈব দুর্ঘটনা-জনিত দুঃখ), আধিভৌতিক দুঃখ (ভূতসমূহ হতে দুঃখ)— এ ত্রিবিধ দুঃখের শান্তি হউক।

ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি! ওঁ শান্তি!
হর হর মহাদেব