Amar अमर Roy राय's Album: Wall Photos

Photo 7 of 14 in Wall Photos

আদিকবি ভানুভক্ত আর আমাদের রামায়ন
" একদিন নারদ সত‍্যলোক পুগি গয়া লোককো গঁরু হিত ভনি ব্রহ্মা তাঁহি থিয়া পর্যা চরনমা খুশি গরায়া পনি! "
"একদিন নারদমুনি সত‍্যলোকে পৌছে গিয়ে গয়া লোকের গরু হীত বললেন,ব্রহ্মা চরনে পড়ে খুশি হইলেন ।"
উপরের শ্লোক ১৩ ই জুলাই , আষারের ২৯ তারিখ ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রায় মাসাধিক সময় চলতে থাকা ভানুজয়ন্তি ,ভানু স্মরন দিবস বা নেপালী ভাষিরা একদিনের উৎসব রুপে পালন করে । এই বিশেষ দিন একদিনের হলেও প্রতিযোগীতা রুপে হোক আদিকবির শ্রদ্ধাঞ্জলী রুপে হোক , মঞ্চে পালটি মেরে বসে শোনা অথবা সোনাতনী হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্ৰন্থ রামায়ন নেওয়া। এরপর আমরা রামায়ন বন্ধকরে নিজের নিজের রুচি,ইচ্ছানুসার পড়ে-নাপড়ে হোক,আগামী বছরের জন‍্য সুরক্ষিত রাখি । এভাবে রামায়ন পড়ে আমরা আমাদের আদি কবি ভানুভক্তকেও পড়ে থাকি এবং আমাদের মাতৃ ভাষাকেও ভালোবেশে থাকি ।
যেভাবে আমরা রামায়নের নাম নেওয়ার সাথেই আমাদের আস্থার প্রতীক ভগবান শ্রী রামকেও বুঝি । সেভাবেই আদিকবি ভানুভক্তকেও বুঝি ।নেপালী ভাষা এবং রামায়নকে স্মরনকরে থাকি । নেপালী ভাষা কবি ভানুভক্ত হতে শুরু হয়েছে এমন টা নয় । উনার পূর্বেও নেপালী ভাষা ছিল কিন্তূ এমন সরল - সহজ রূপে বা জনমানসে বলার বা বোঝার মতো হয়তো ছিল না । ভাষাগত একতা বা ভাষার একিকরন পূর্বে এই রূপ ছিল না বলে শোনা যায় ।
জনমানসে বলার এবং বোঝার মতো বিশুদ্ধ নেপালী ভাষা বিষয়ে উনার চেয়ে পূর্বের বিদ‍্যান , ঞ্জানীগুনিজন সম্ভবত এতটা ধ‍্যান দেয়নি বা চিন্তাও করেনি । কবি ভানুভক্ত এই রিক্তস্থান পূর্ণ করে , সর্ব প্রথম সংস্কৃত থেকে বাল্মীকি রামায়নকে নেপালী ভাষায় অনুবাদ অথবা উল্টোকরে আমাদের বিশুদ্ধ নেপালী ভাষা মাত্র কেবল দেয়নি বরঞ্চ নেপালী ভাষিদের আধ‍্যাত্মিক বিকাশের সাথে সাথে নেপালী ভাষাকে একত্রিকরনে একটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নিয়েছে । লোকের গরুহীত বলে উক্তিটি চরিতার্থ করেছেন এবং সারা বিশ্বের নেপালী ভাষিদের আদিকবি ভানুভক্ত আচার্যের নামে চিনেছে আর ভানুভক্ত জয়ন্তিকে ভাষার একত্রিকরন উৎসব রূপে বা জাতীয় উৎসব রূপে পালন করি বললেও অতিসায়োক্তি হবে না ।
ভানুভক্তের জন্ম নেপালের তনহু জেলার রম্ঘা গ্ৰামে ২৯ শে আষাঢ় বিক্রম সম্বত ১৮৭১ , ১৩ ই জুলাই ১৮১৪ সালে । ঠাকুরদা ধনঞ্জয় আচার্য ছোটো বেলায় ভানুভক্তকে সংস্কৃত শিখিয়েছেন । লোক কথায় বলেছে - ভানু যখন ছোটো ছিল তখন বন জঙ্গল দেখার সময় , ঘাসির সঙ্গে দেখাহয় সেই দেখাই উনার জীবনের দিসা পরিবর্তন ঘটায় । যখন ধনি ঘরের ভানু একটা দরিদ্র ঘাসির কাছ থেকে প্রেরনা পায় এবং অশিক্ষিত ঘাসি তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি বিকশিত করে দেয় । তখন ভানুভক্ত ধার্মিক , জনহিতে কিছু কাজ করে ,লোকহিতে কাজ করার শপথ নিচ্ছেন ।
ঘাসিকে সম্মান প্রদর্শন করতে তাকে নিয়ে কবিতা লিখে তাকে অর্পন করেন -- " ভব জন্ম ঘাসতির মনদিই ঘন কামায়ো নাম কেহি রহোস্ পছি ভনের কুয়া ঘনায়ো ঘাসি দরিদ্র ঘরকো তর বুদ্ধি কস্তো ম ভানুভক্ত ধনি ভইকন আজ যস্তো মেরা ইনার নত সত্তল পাটি কেহি ছন যে ধনর চিজহরু ছন্ ঘরভিত্রনৈ ছন্ ত‍্যস ঘাসিলে কপ্সরী দিয়েছ আজ অতি ধিক্কার ছ মকন বস্নু নরাঘী কীর্তি "
রামায়ন ছাড়া উনি ভক্তমালা , নীতি ঞ্জানহরুলে ভবিয়েকো প্রশ্নোতর মালা , বধুহরুকো আচরন ।ঞ্জানের জন‍্য নারি শিক্ষা তথা কিছু ফুটকর কবিতাও লিখেছেন । উনি ধার্মিক ছিলেন রামায়নকে সংস্কৃত থেকে নেপালী অনুবাদ করার সময় ধার্মিকতার আধারে সমাজকে নির্দিষ্ট এবং সুপথে ফেরানোর একটা অভিপ্রায় ছিল । ওনার সৃষ্টি গুলি প্রায় আধ‍্যাত্মিক ও সামাজিক চেতনার পক্ষে ছিল । উনি সমাজকে ধার্মিক আধারেও অগ্ৰেসর হচ্ছে দেখতে চাইতেন । তখন নেপাল একটা হিন্দু রাষ্ট্র ছিল এবং হিন্দু রাজ‍্যে যদি রামায়ন না থাকে তাহলে অন‍্যদের নজরে অসভ‍্য ও অশিক্ষিত মনে করত । রামায়ন ই নেপালী ভাষিদের সংস্কৃত ভাষিদের শ্রেনীতে নিয়ে যায় বা জাতে তুলে দেয় । রামায়ন মর্যদা পুরুষোত্তম শ্রী রামের কথা , রাম ,সিতা ,লক্ষ্মন, ভরতের মতো আধ‍্যাত্মিক ও আদর্শবান চরিত্র দ্বারা নেপালী সমাজ নির্মান করার কথাও এখানে স্পষ্ট হয়েছে । ভানুভক্ত রামায়ন একটা সিঙ্গো রাষ্ট্রকে সমর্পিত করায় সাহিত‍্যে একটা বড় বল পায় এবং জনমানসে সাহিত‍্যর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে শুরু করে । শুয়েপরা সমাজকে জাগরনের জন‍্য একটা মুখ‍্য সাধন সাহিত‍্য ছিল বলে জনমানসে চেতনাবোধ হয় । বিশিষ্ট সাহিত‍্যকার সূর্য বিক্রম গবালী , ভানুভক্তের অবদানকে এভাবে ব‍্যক্ত করেছেন " যিনি নেপালী বলিতে কবিতা লেখার বিচার করে রামায়ন নেপালীতে লিখেছেন ।যাঁর রামায়ন লেখার সঙ্গে সঙ্গেই বামুন ,ছেত্রী কেবল নয় , মঙ্গর ,গুরুঙ্গ,নেবার,কিরাত,তামাং প্রভৃতি জাতিরা পড়েছেন । ফলে সমাজে কত বড় গৌরব অনুভব হয় , সবাই খুব খুশি হয় । নেপালী জাতিরুপী ঘরে ঘরে যখন ভানুভক্তের সাহিত‍্য বজ্রলেপন করে তখন রাম আদর্শ পুরুষ , সিতা আদর্শ নারী , লক্ষ্মনের মত আদর্শ ভাই এবং রাম রাজ‍্যের স্বপ্ন সবাই দেখতে শুরু করে।
ডা. পরশমনি প্রধান বলেছেন নেপালীরা যদি ভানুভক্তের ভাষাকে না গ্ৰহন করতো তাহলে পৃথ্বি নারায়ন সাহার ফুলের বাগান হতো না । আজ আমাদের একসূত্রে গেথে , একহয়ে এক আদর্শে কাজ করার প্রেরনা ভানুভক্তের ভাষার জন‍্য ।
নেপালী সাহিত‍্যাকাশে সর্বদা উজ্বল করে থাকা একটি নক্ষত্র ভানুভক্ত আচার্য । রামায়নকে যে লোক ভাষা প্রদান করেছেন , ওনার আগে কেউ করে যেতে পারেননি , এ কথা ধ্রুবসত‍্য । জনমানসে বলা বোঝা এক্কেবারে সরল সহজ , লালিত‍্যময় শব্দ চয়ন ও শৈলির কারনে উনি লোক প্রিয় হয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে উনি আমাদের আদিকবি হয়েছেন এবং নেপালী ভাষা এই সংসারে বেঁচে থাকা পর্যন্ত আদিকবি হয়ে অমর থাকবেন ।