বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কালনা কাটোয়া's Album: Wall Photos

Photo 15 of 28 in Wall Photos

পৃথিবীতে হিন্দুর সংখ্যা কত? ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ১১৫ কোটির কিছু বেশি। মূল নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ। ভারতে ১০৮ কোটির একটু বেশি। নেপালে আড়াই কোটির কাছাকাছি। বাংলাদেশে সওয়া কোটি। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় কিছু কিছু। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ১ কোটির উপরে। মায়ানমার, মালয়েশিয়াতেও সংখ্যা ভালই। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ছোট-বড় অন্য বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে সংখ্যাটা মোট ওই রকম।
পৃথিবীতে মুসলিমের সংখ্যা কত? ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী ১৯০ কোটির আশেপাশে।
পৃথিবীতে খ্রিস্টানের সংখ্যা কত? ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী ২৪০ কোটির মতো। ৫ বছরে আরও একটু বেশি সম্ভবত।
অর্থাৎ পৃথিবীতে যে দু’টি ধর্মমতের অনুসারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সে দু’টির চেয়ে সনাতন হিন্দুত্বের অনুসারীরা সংখ্যায় যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছেন, এমন নয়। কিন্তু রাষ্ট্রধর্মের প্রশ্ন যখন আসে, তখন হিন্দুত্ব অনেক পিছিয়ে। খ্রিস্টান ও ইসলামি রাষ্ট্রের সংখ্যা এ বিশ্বে প্রচুর। বৌদ্ধ রাষ্ট্রও বেশ অনেকগুলোই। কিন্তু হিন্দুরাষ্ট্র একটাও নেই। একটাই ছিল, নেপাল। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ‘গণতন্ত্র’, নাকি চিনতন্ত্র, নাকি বকচ্ছপতন্ত্র, নাকি হাঁসজারুতন্ত্র— কী একটা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সেই পরিচয়টা নেপাল জলাঞ্জলি দিয়েছে। যদিও নিজেদের ছাগলকে নেপালিরা সামনে থেকে কাটবেন, নাকি পিছন দিক থেকে, সেটা নির্ধারণের ভার নেপালিদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভাল। ওটা নিয়ে আমাদের অর্থাৎ ভারতীয়দের কথা বলার অধিকার সীমিত।
কিন্তু নেপালের শাসনতন্ত্র কেমন হবে, রাজতন্ত্র-উত্তর নেপাল কেমন হবে, সে বিষয়ে কথা তো আমরা বলেছিলাম। নেপালের নতুন শাসনতন্ত্রের রূপরেখা যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন তো আমরা প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম। সে দেশে কী রকম শাসনতন্ত্র হবে, তার আবহ কেমন হবে, নতুন রং-রূপের সরকার ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক রাখবে, সে সব ছকে দিয়ে আসতেই তো জেএনইউ-এর ‘মেধাবী’ প্রাক্তনী সীতারাম ইয়েচুরি কাঠমান্ডু উড়ে গিয়েছিলেন। মানে নিজে থেকে উড়ে যাননি, ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া মাইনো গাঁধীর ‘সুবিবেচিত’ মার্গদর্শনে প্রাণিত হয়ে হিরন্ময় নীরবতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সরকারই সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরিকে নেপালে পাঠিয়েছিল। ইয়েচুরি কী অসাধারণ ছক কষে রেখে এসেছিলেন, তার ফল অল্প দিনেই টের পেতে শুরু করেছিল ভারত। এখনও আরও ভাল ভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে।
নেপাল কেন হিন্দুরাষ্ট্র রইল না? সে প্রশ্ন নিয়ে এখন আর মাতামাতি করে লাভ নেই। কপাল চাপড়েও লাভ নেই। শুধু কংগ্রেস আর সিপিএম-কে চিনে নেওয়ার দরকার রয়েছে। এদের রাজনীতির ঘরানাটাকে ভাল ভাবে বুঝে নেওয়ার দরকার রয়েছে।
ভারতও হিন্দুরাষ্ট্র নয়। কিন্তু ভারতীয় জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই জনগণনার সময়ে ধর্মবিশ্বাস সংক্রান্ত প্রশ্নে ‘হিন্দু’ হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। নেপালে সেটা ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ রাষ্ট্রধর্ম হিন্দু না হলেও দুই দেশই যে হিন্দুপ্রধান দেশ, তা নিয়ে সংশয় নেই। সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী, পরম্পরা-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি সাক্ষী, মহাকাব্য সাক্ষী, হিমালয় পর্বত সাক্ষী— ভারত-নেপাল অঙ্গাঙ্গী। কিন্তু সনিয়া মাইনো গাঁধীর অসামান্য কোচিং-এ জেএনইউ-এর ‘মেধাবী’ ছাত্র কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি কাঠমান্ডুর মাঠে ভারতের প্রতিপক্ষের (পড়ুন চিনের) গোলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ব্যাকভলি মেরেছিলেন সে দিন। অতএব সেই নিপুণ শট পরিণত হয়েছিল আত্মঘাতী গোলে। যত দিন যাচ্ছে, সেই নিপুণ আত্মঘাতী ব্যাকভলি তত বেশি করে ভারতের গোলপোস্টের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে| ঠিক স্লো পয়জনের মতো, দিন যত যাচ্ছে, বিষক্রিয়ার প্রভাব তত তীব্র হচ্ছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী এখন চিনের দোলনায় শুয়ে শুয়ে হাত-পা ছুড়ে খিলখিল করে খেলছেন, আর প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং প্রশান্তির হাসি নিয়ে দোলনাটা দুলিয়ে যাচ্ছেন।
নেপালের সঙ্গে ভারতের ‘রোটি-বেটি কা সম্বন্ধ’— প্রবচন ছিল এই কথাটা। ওটাই ছিল চিনের সবচেয়ে বড় অস্বস্তির কারণ। হাজার চেষ্টা করেও নেপালকে ভারতের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারত না। তাই বাঁকা পথ নিয়েছিল বেজিং। নেপালের সরকারকে কব্জা করার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। রাজতন্ত্রকে উপড়ে ফেলার যে চেষ্টা নেপালে শুরু হয়েছিল, মাওবাদী দল যে পাখনা মেলেছিল, সে সব এমনি এমনি হয়নি। বিপুল চিনা বিনিয়োগ ছিল সে সবের পিছনে। অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ-সহ নানা সমর্থন নেপালি মাওদীদের নিরন্তর জুগিয়ে গিয়েছিল চিন। ভারতের সরকার তা জানত না, এমন নয়। ফলে ভারত সরকারের তরফ থেকে নেপালের রাজতন্ত্রকে সহায়তা করার চেষ্টাও ছিল। কিন্তু মোক্ষম সময়ে দিল্লিতে রাজনীতির রং বদলেছিল, তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ইচ্ছাও অলক্ষ্যেই বদলে গিয়েছিল। নেপালের যে শাসনতন্ত্র ভারতের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ, সেই শাসনতন্ত্রকে রক্ষা করার বা সাহায্য করার আগ্রহ ক্রমশ কমে গিয়েছিল দিল্লিতে।
অতএব নারায়ণ হিতি প্রাসাদের হাত থেকে ক্রমশ বেরিয়ে যাচ্ছিল ক্ষমতার রাশ, মাওবাদী তাণ্ডব গ্রাস করে নিচ্ছিল গোটা নেপালকে। অচিরেই রাজতন্ত্রের পতন এবং জোড়াতালি দিয়ে তদারকি প্রশাসন বসিয়ে নতুন শাসনতন্ত্র রচনার কাজ শুরু। কোন সময়ে ঘটল এটা? সেই সময়ে ঘটল, যখন দিল্লি দরবারের মুখোশের নাম মনমোহন, মুখের নাম সনিয়া আর সিংহাসনের চালিকাশক্তি ৬১ আসনের গর্বে সংসদ কাঁপাতে থাকা বামপন্থীরা।
পুষ্পকমল দহল ওরফে প্রচণ্ড এবং বাবুরাম ভট্টরাই— এই নামদুটো খুব শোনা যেত সে সময়ে। নেপালের মাওবাদীদের সর্বাধিনায়ক তাঁরা। রাজতন্ত্রকে উপড়ে ফেলে যখন নতুন শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের তোড়জোড় শুরু হল নেপালে, তখন এঁদের নিয়ে চর্চা আরও বাড়ল। সাধারণ ভারতবাসী জানলেন, বাবুরাম ভট্টরাই জেএনইউ-এর ছাত্র ছিলেন। জানা গেল, ওঁদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য কমরেড সীতারাম ইয়েচুরিই সেরা। কারণ তিনিও জেএনইউ প্রাক্তনী, তিনিও একই ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী, তিনিও আরও কত কিছু।
এই প্রচণ্ড বা বাবুরামরা যে নেপালের ভারতপন্থী শাসনতন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে সক্রিয়, সে কথা কিন্তু অনেক বছর আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তখন ওই সব জেএনইউ-পরিচয় প্রকাশ্যে আনেনি লাটিয়েন্স দিল্লির লেফ্ট-লিবারেল ইকো-সিস্টেম। তখন সব চুপচাপ, সবাই নীরব। নেপালের ভারতপন্থী শাসনতন্ত্রকে বাঁচানোর সুযোগ তখনও ছিল| ইয়েচুরিকে তখন কাঠমান্ডু পাঠিয়ে বাবুরামদের সঙ্গে কথা বলানোই যেত| কিন্তু তা করা হয়নি, সে সব ভাবতেই পারেননি লেফ্ট-লিবারেলরা| বরং ভারতপন্থী রাজতন্ত্র উপড়ে ফেলে চিনপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠার সময় আসতেই নেচে নেচে তাঁরা কাঠমান্ডু পাঠাতে পেরেছিলেন কমরেড ইয়েচুরিকে। এটাই হল লাটিয়েন্স দিল্লির লেফ্ট-লিবারেল ইকো-সিস্টেম। যে ভূখণ্ডের সঙ্গে আমাদের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক, সেই ভূখণ্ডকে যখন কব্জা করার মরিয়া চেষ্টা করতে থাকে ড্রাগন-সুলভ প্রচণ্ড প্রতিপক্ষ, তখন মন চঞ্চল হয় না এই লেফ্ট-লিবারেলদের। ভারতীয়ত্বের শিকড় থেকে কোনও কিছুকে বিচ্ছিন্ন করা যাচ্ছে দেখলেই মগজ পুলকিত হয় বরং।
লেফ্ট-লিবারেলরা সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেও নতুন নাকে-কান্না শুরু করেছেন| কলকাতা বন্দরের নাম কেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেঁদে-কেটে অস্থির| যাদবপুরি পাঁঠারা (সব যাদবপুরি নয়, কেবল পাঁঠা যাদবপুরিদের কথাই বলে হচ্ছে) আগেই তিড়িং-বিড়িং করতে করতে রাস্তায় নেমেছিল| 'শ্যামাপ্রসাদ মানব না, শ্যামাপ্রসাদ মানব না' বলে মাঝরাস্তায় মুজরো করছিল| ওদের দেখলে কূটনীতিক রণেন সেনের সেই বিখ্যাত উক্তি আমার বার বার মনে পড়ে--- 'হেডলেস চিকেন'| কিন্তু যাঁর রাজনৈতিক বোধবুদ্ধিকে আমি যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি, সেই সুজন চক্রবর্তীও দেখলাম সম্প্রতি ওই একই সুর ধরেছেন|
পেশাগত কারণে সুজনদার সঙ্গে আমার আলাপ রয়েছে| সম্পর্কও বেশ ভালই| এ দেশের বামেদের 99%-ই বরাবর যে রকম বাস্তবকে অস্বীকার করে রাজনীতি করতে চেয়েছেন, সুজন চক্রবর্তীর মতো কতিপয় তাঁদের গোত্রে পড়েন না| কোন বাধ্যবাধকতায় সেই সুজনদা শ্যামাপ্রসাদকে 'বাংলা ভাগের উদগাতা' বলে আক্রমণ করলেন, আমি বুঝলাম না|
ছোটবেলায় শুনতাম, কয়েকটা বস্তাপচা সিপিএম ওই কথাটা বলত| শ্যামাপ্রসাদ কিছুই করেননি, তিনি শুধু বাংলাটা ভেঙে দিয়েছিলেন--- এই রকম মন্তব্য করত| এটা বামেদের বরাবরের রোগ| সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রাজনীতি করতে পারে না| সব সময় সত্যের অপলাপ ঘটিয়ে, সত্যকে গুলিয়ে দিয়ে, ঘোলা জলে মাছ ধরতে হবে--- এইটাই হল লেফ্ট এবং তথাকথিত লিবারেলদের প্রবণতা| তাই স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলার হিন্দুপ্রধান অংশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যে জোরদার প্রচেষ্টা শ্যামাপ্রসাদ শুরু করেছিলেন, সেটাকে 1905 সালের কার্জন-কৃত বঙ্গভঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে এরা| সুজনদা কী ভাবে ওই স্রোতে গা ভাসালেন, ভেবে আশ্চর্য হই!
ভারত কেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যদি সে দিন রুখে না দাঁড়াতেন, পশ্চিমবঙ্গ নামে কোনও অস্তিত্বই তৈরি হত না| গোটা বাংলা অন্তর্ভুক্ত হত পাকিস্তানের, সাধের কলকাতা-প্রাণের কলকাতা হয়ে উঠত মৌলবাদী রাষ্ট্র পাকিস্তানের একটা শহর| সে রকমটা যদি ঘটত, ঘাড়ের শিরা ফুলিয়ে বামপন্থী রাজনীতিটা করতে পারতেন তো সুজনদা? পাকিস্তানে গিয়ে যোগেন মণ্ডলের কী হাল হয়েছিল, আপনি নিশ্চয়ই জানেন সুজনদা| আজকের পাকিস্তান বা আজকের বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতির অস্তিত্ব কতটুকু, আপনি নিশ্চয়ই জানেন সুজনদা| তার পরেও ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা বোধ থাকবে না! শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের প্রশংসা না করতে পারার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আপনার রয়েছে জানি| কিন্তু নিজের পায়ের তলার মাটিটার কথা অন্তত ভাবুন| সেটা ভেবে নিন্দা বা আক্রমণ থেকে অন্তত বিরত থাকুন| না হলে গোটা পশ্চিমবঙ্গকে তো বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে!
'লিবারেল'দের ইতালীয় নেত্রীর দ্বারা প্রেরিত হয়ে কমরেড ইয়েচুরি তো 'ইমানদারি'র পরিচয় দিয়েই এসেছিলেন নেপালে গিয়ে| সে 'ইমানদারি' আমাদের কতটা 'সুফল' দেবে, সে সময়ে তা বোঝা যায়নি| এখন বোঝা যাচ্ছে হাড়ে হাড়ে, ভবিষ্যতে বোধ হয় আরও ভাল ভাবে টের পাওয়া যাবে| ওই গোত্রের 'ইমানদারি' দেখানো থেকে আপনি অন্তত দূরে থাকুন সুজন চক্রবর্তী, আপনাকে তো একটু অন্য ভাবে চিনি!
যা কিছু মৌলিক ভাবে ভারতীয়, যা কিছুর শিকড় ভারতীয়ত্বের গভীরে, যা কিছু ভারতপন্থী, সেই সব কিছুকেই তীব্র ঘৃণার চোখে দেখা লেফ্ট-লিবারেলদের অভ্যাস আমি জানি| তার জেরে এই লেফ্ট-লিবারেলদের জনভিত্তি কতটুকু পরিসরে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে, সে-ও আমরা সকলেই দেখছি| সুজন চক্রবর্তী, আপনার পায়ের তলার মাটি এখনও অতটা সরে যায়নি| পরিচিত বাস্তববাদী ভাবমূর্তিটা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ক্ষতি না করলেই বোধ হয় ভাল করবেন...