tarun malakar's Album: Wall Photos

Photo 59 of 265 in Wall Photos

অহং ব্রহ্মাস্মি
-----------------------
বীতরাগভয়ক্রোধা মন্মনা মামুপাশ্রিতাঃ।
বহবো জ্ঞানতপসা পুতা মদ্ভাগমাগতাঃ।। ( গীতা -১০/৪)
শ্লোক বিশ্লেষণঃ
বীতরাগভয়ক্রোধা-- রাগ( আসক্তি অর্থাৎ কাম) , ভয় ও ক্রোধ বীত( বিগত) হইয়াছে যাহার, তিনি বীতরাগভয়ক্রোধা। রাগ( আসক্তি) , ভয় ও ক্রোধ থাকে মুলাধান, স্বাধিষ্ঠান ও মনিপুর পদ্মে -- মুলাধার হতে মনিপুরপদ্ম পর্যন্ত তমোগুনের স্থান ; যাদের মন উক্ত স্থানে রয়েছে, তারা রাগ ( আসক্তি) , ভয় ও ক্রোধ পরায়ন ; যারা সাধক নহে, তাহাদিগের মন উক্ত স্থানে ভ্রমন করে বিধায় অসাধক মাত্রেই রাগভয়ক্রোধ পরায়ণ এবং ইহা হইবার কারনে সাধারণ মনুষ্য জন্মমৃত্যুর অধিন। এখন ক্রিয়াযোগ সাধন করিয়া যিনি প্রাণবায়ুর দ্বারা মুলাধারস্থিত মনকে মুলাধার থেকে উঠাইয়া ক্রমে স্বাধিষ্ঠান, মনিপুর অতিক্রম করাইয়া ঐ মনকে হৃদপদ্ম অনাহতে আনয়ন করিতে সমর্থ হইয়াছেন, তিনিই " বীতরাগভয়ক্রোধা "। সুতরাং কীভাবে বীতরাগভয়ক্রোধা হইতে হয়, তাহা উপদিষ্ট হইল। এই প্রকার বীতরাগভয়ক্রোধ হইবার পর যোগাভ্যাসকারীকে যথাক্রমে মন্মনা এবং মামুপাশ্রিত হইতে হয়। মন্মনা ও মামুপাশ্রিতা কাহাকে বলে এবং কীভাবে তাহা হইতে হয়, তাহার উপদেশ করা হইতেছে ---
মন্মনা= মৎ+ মনা ; যাহার মন মৎ ( পরমাত্মায়) যুক্ত হইয়াছে, তিনিই মন্মনা ( মন্ময়া) ; মুলাধার হইতে আজ্ঞার অধঃ পর্যন্ত স্থান হইল গুনের স্থান ; ইহার উর্ধ্বে ( আজ্ঞা হতে সহস্রার পর্যন্ত স্থানে) গুনাতীত স্থান -- ইহাই পরমাত্মার স্থান বা মৎ- স্থান বা গোলকধাম --। বীতরাগভয়ক্রোধ সাধক নিজ মনকে হৃদপদ্ম পর্যন্ত উঠাইয়াছিলেন। এখন হৃদপদ্মস্থ মনকে তথা হইতে উঠাইয়া বিশুদ্ধাখ্য পদ্ম অতিক্রম করিবার পর আজ্ঞাচক্রস্থ কুটস্থ চৈতন্যে আনিয়া বসাইয়া দিতে সমর্থ হইয়াছেন, তাহারাই মন্মনা ( মন্ময়া) হইতে পারিয়াছেন। এ-ই অবস্থায় উপনীত হইতে পারিলে জীবাত্মার জীবত্ব নাশ হইয়া থাকে ; ফলে পরমাত্মা রুপ পরমগুরু কৃষ্ণকে আশ্রয় করতে পারা যায় অর্থাৎ সাধনা করিয়া যাহারা নিজের মনকে মুলাধারাদি পদ্ম হতে উঠাইয়া আজ্ঞা চক্রস্থ কুটস্থ চৈতন্য স্থানে আনিয়াছেন, তাহাদের জীবভাব না থাকায় তাহারা ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারিয়াছেন এবং ঐ আশ্রয় হতে তাহারা আর বিচলিত হন না অর্থাৎ গুনের স্থানে নামিয়া আসেন না, তাহারাই " মামুপাশ্রিতা "।
এ-ই প্রকারে সাধনা করিয়া মামুপাশ্রিতা হইলে কি হয়, তাহা শ্লোকস্থিত পরের চরণে বলা হইতেছে ---
বহবো -- বহু সাধক
জ্ঞানতপসা = আত্মজ্ঞান লাভ করাই যাহাদের তপস্যা ( সাধনা), তাহারাই জ্ঞানতাপস ; অর্থাৎ পূর্বোক্ত প্রকারে মামুপাশ্রিত হইবার পর যাহারা আত্মজ্ঞান লাভ করিবার উদ্দেশ্য যোগবিভুতি সকল শীতকালের কন্থার ন্যায় পরিত্যাগ করিতে পারিয়াছেন, ঐ সাধুই জ্ঞানতাপস ; তিনি যোগবিভতি ত্যাগ করিবা মাত্র নিজেকে ব্রহ্মের সহিত একীভূত করিয়া ফেলিয়াছেন ; ফলে তিনি ব্রহ্ম ব্যতীত অপর কিছুই দর্শন করেন না। এই প্রকার ব্রহ্মদ্রষ্টা হইয়া তাহারা মদ্ভাবমাগতা ( মদ্ভাব মানে ঈশ্বরের স্বভাব অর্থাৎ মদ্ভাবমাগতা মানে ঈশ্বরের স্বভাব প্রাপ্ত হন। ঈশ্বরের স্বভাব প্রাপ্ত হইলেই ঈশ্বর হওয়া যায়) ;
সুতরাং গীতার শ্লোকটি ইহাই উপদেশ প্রদান করিলেন যে, মানুষ তাহার জীবভাবকে কীভাবে ত্যাগ করিয়া ঈশ্বর ভাব প্রাপ্ত হইয়া ঈশ্বর হন।
(পন্ডিত অনিতা দেবশর্মা তর্করত্ন)