tarun malakar's Album: Wall Photos

Photo 79 of 265 in Wall Photos

জয় ব্রহ্মগুরুর জয়

ক্রিয়াযোগ হল ব্রহ্মবিদ্যা,আত্মবিদ্যা, অধ্যাত্মবিদ্যা এবং যোগ শাস্ত্র। এটা কোন দেবদেবীর সাধনা নয়,এটা প্রাণের সাধন।দেবাদিদেব যাঁকে ভারতবাসী ভগবান্ বলে মানেন তিনিও সদাই ধ্যানমগ্ন, যোগেশ্বর হরি তিনিও ধ্যানমগ্ন, তাঁরা কার ধ্যানে মগ্ন?তাহলে তাঁদের ওপরেও কেউ নিশ্চয় আছেন?তিনি কে?তিনি হলেন প্রাণ। সর্ব্বং প্রাণময়ং জগৎ।সর্বএ প্রাণই বিদ্যমান। অনন্ত সৃষ্টির মধ্যে প্রাণ ছাড়া অন্য কিছু নেই।তাই সবাই প্রাণের ধ্যান করেন।শিবের ভেতরে যিনি,কালীর ভেতরে যিনি, সবার ভেতরে যিনি তিনিই প্রাণ।এই প্রাণই ভগবান,এই প্রাণই ঈশ্বর, এই প্রাণই বিষ্ণু, এই প্রাণই পিতামহ,এই প্রাণই ধর্ম।তাহলে দেখা গেল ভগবান্ এবং ধর্ম আলাদা নয়।লোকে ভাবে ধর্ম পথে চললে ভগবানকে পাওয়া যাবে।যেন ধর্ম একটা পথ।এই দুটো যে অভেদ তা আমরা জানি না।এটাই আমাদের অজ্ঞতা।
অনেকে বলে ভারতবাসী পুতুল পূজক।এ বিষয়ে কোন মহাপুরুষ বলেছেন- "মায়ের মূর্তি গড়াতে চাই মনের ভ্রমে মাটি দিয়ে।" আবার কোন মহাপুরুষ বলছেন- "মৃন্ময়ীর মধ্যে চিন্ময়ীকে দেখ।" এই দুটো আর্দশ আমাদের সামনে আছে,আমরা কোনটা নেব? কেউ বলছেন- অনন্ত সর্বব্যাপী সর্ব প্রসবিনী মাতৃসও্বা তাঁকে একটা মাটির মূর্তির মাধ্যমে পাওয়ার চেষ্টা এসব মনের ভ্রম মাএ।আবার কেউ বলছেন - মাটির মূর্তির মধ্যে অনন্ত সর্বব্যাপী চিন্ময়ী সও্বাকে লাভ কর।যদি আমরা ভাবি দুটোই ঠিক,তাহলে একটা হল অনন্তকে ক্ষুদ্রের মধ্যে পাওয়া। আর একটা হল ক্ষুদ্রের মধ্যে অনন্তকে পাওয়া। এই প্রাণ যখন সর্ব্বব্যাপী তখন তিনি সবকিছুর ভেতরে বিদ্যমান। ক্ষুদ্রের ভেতরেও তিনি, অনন্তের ভেতরেও তিনি। তিনি নেই কোথায়?কিন্তু মূলতঃ তিনি অনন্ত। অনন্ত বলেই তিনি ক্ষুদ্রে আছেন।মানুষ ক্ষুদ্র বলে ক্ষুদ্রের মাধ্যমে অনন্তকে পেতে চায়,কিন্তু যখন সে অনন্তকে পায় তখন সে আর ক্ষুদ্র থাকে না।কারণ অনন্তই মূল।
সাধক নিজেকে ক্ষুদ্র ভাবেন তাই তিনি অনন্তকে পেতে চান।সাধক অনন্তের সাথে সম্বন্ধ পাতিয়ে বা নাম ধরে ডাকেন।সাধক অনন্তের মধ্যে মিশে যেতে চান না,ভাবেন অনন্তের মধ্যে মিশে গেলে ভক্ত ভগবান্ সম্পর্ক থাকবে না,ভক্তের অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে।তাই সাধক ভগবানের সাথে সাথে লীলা করেন।কথা বলেন,মনের আকুতি নিবেদন করেন,প্রার্থনা করেন ইত্যাদি।সাধক তাঁর নিজস্ব অস্তিত্ব বজায় রাখতে চান।তিনি ভাবেন না যে অনন্তই তাঁর মূল সও্বা।তাই তিনি দ্বৈতবাদী।
যোগী ভাবেন অনন্তই যখন মূল, অনন্ত না থাকলে ক্ষুদ্র থাকে না।তাই তিনি ভাবেন যে ক্ষুদ্র হয়েও তিনি অনন্ত।বর্তমানে তিনি চঞ্চলতার ফেরে পরে ক্ষুদ্র হওয়ায় নিজেকে আলাদা বলে মনে হয় মাএ,এটাই ভ্রম।জল ছাড়া যেমন মাছ থাকে না তেমনি অনন্ত ছাড়া ক্ষুদ্র থাকে না।তাই তিনি ভাবেন চঞ্চলতাই যত বাধা। সেই বাধাকে সরিয়ে দিয়ে তিনি অনন্তের মধ্যে মিশে যান।তাই তিনি অদ্বৈতবাদী।যোগী বলেন এখন যিনি সাধক, পরবর্তী কোন জন্মে এসে তাঁকেও যোগী হতে হবে এবং অনন্তে মিলতে হবে।যেমন আকাশে ধোঁয়া উঠলে কিছু দূর পর্যন্ত তার অস্তিত্ব থাকে। শেষে মিলে যায়,তেমনি যত ক্ষুদ্র সবই অনন্তে মিলে যেতে বাধ্য। অনন্ত থেকেই সবকিছু উৎপওি হয়েছে,অনন্তেই মিলে যাবে আপন তাগিদে,যেমন ধোঁয়া মিলে যায়।এটাই আলাদা আলাদা ক্ষুদ্রের পরিণতি। কেউ অনন্ত থেকে আলাদা নয়।কিছু দিনের জন্য আলাদা বলে মনে হয় মাএ।
এ কারণে সাধক মূর্তির পূজা করে তাঁকেই অনন্ত ভাবেন এবং মনের সব কথা তাঁকেই নিবেদন করেন।তিনি মনের অধীনে থেকে যত কিছু করেন।
যোগী বলেন চঞ্চলতার জন্যই মনের প্রকাশ;এই মন ইন্দ্রিয়। মনের অধীনে থাকা মানেই চঞ্চলতায় থাকা।চঞ্চলতায় থাকলে অনন্তে মিলে যাওয়া যাবে না।ধোঁয়া চঞ্চল, আকাশ অনন্ত স্থির।
এ কারণে বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, গীতা এসবের মধ্যে মূর্তি পূজার কথা বলা হয় নি।মূর্তি পূজা প্রতীক মাএ।প্রতীককেও মিলে যেতে হবে অনন্তে।অনন্তই চূড়ান্ত সত্য।যা অনন্ত তাই স্থির।

" ব্রহ্মগুরু যোগাচার্য্য মহামহোপাধ্যায় ডঃ অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায় " লিখিত গ্রন্থ থেকে গৃহীত