tarun malakar's Album: Wall Photos

Photo 90 of 265 in Wall Photos

২০১৮-এর জুলাই। সুপ্রিম কোর্ট অনুরোধ করলেন পুরীর মন্দিরের দীর্ঘদিনের ট্র্যাডিশন (কেন এই ট্র্যাডিশন তা আপনারা বুঝতে পারবেন লেখাটা পড়লে।) ভেঙ্গে অহিন্দুদের প্রবেশাধিকার দেওয়ার। হিন্দুদের ট্র্যাডিশনে প্রশাসনের নাক গলানোর অভ্যাস অবশ্য অনেকদিনেরই। যদিও অন্য ধর্মের বেলায় প্রশাসনের চোখে ঠুলি পরানো থাকে।
কিন্তু এবার তীব্র প্রতিবাদ করলেন শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী, গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব, VHP এবং অন্যান্য ভক্তবৃন্দ। তাঁদের বক্তব্য ছিল বিশ্বজুড়ে যখন টেররিজম বাড়ছে সেই মুহূর্তে এইরকম ফরমান মেনে নেওয়া বোকামি।

আসলে কি জানেন, তাঁরা ভুক্তভোগী মানুষ। বর্বরদের ধর্মীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অনেক কষ্ট করে, অনেক জীবনের বিনিময়ে পুরীর জগন্নাথদেব বিগ্রহের পবিত্রতা রক্ষা করেছেন।
Orissa Review-এ এই আক্রমণের কারণও উল্লেখ করা হয়েছে পরিষ্কারভাবেই।
"To non-Hindu invaders the temple was a good place to display Zihad (Religious War). To loot its property and profane idols were motives behind every invasion."

আজ সেইরকম কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। মনে রাখবেন এই লিস্ট মোটেও সম্পূর্ণ নয়। আমরা শুধুমাত্র কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করছি যার ফলে বিশ্ববিখ্যাত রথযাত্রা পর্যন্ত বন্ধ করতে হয়েছিল।

১) প্রথমবারের মতো রথযাত্রা বন্ধ হয় তৎকালীন বাংলার নবাব সুলেইমান কিরানীর সেনাপ্রধান কালাপাহাড় ১৫৬৮ সালে মন্দির আক্রমন করায়। তার ফলে ১৫৬৮-১৫৭৭ পর্যন্ত রথযাত্রা নয় বছরের মতো স্থগিত থাকে।

২) ১৬০১ সালে মির্জা খুরম মন্দির আক্রমণ করেন। কিন্তু পুরোহিতরা কপিলেশ্বরের পঞ্চমুখী গোসানী মন্দিরে বিগ্রহ স্থানান্তরিত করায় সেবারের মতো বিগ্রহ বেঁচে গেলেও ওই বছর রথযাত্রা হতে পারেনি।

৩) ১৬০৭-সালে ওড়িশার মুঘল সুবেদার কাশিম খান মন্দির আক্রমণ করেন। আবারও বিগ্রহকে লুকিয়ে খুড়দার গোপালজীর মন্দিরে রাখা হয়। ফলে ওই বছরও রথযাত্রা হতে পারেনি।

৪) ১৬১১। আকবরের সেনাপতি টোডরমলের পুত্র কল্যাণ মল আক্রমণ করেন পুরীর জগন্নাথ মন্দির। বিগ্রহকে আগেভাগেই লুকিয়ে ফেলা হয় চিলিকার মহিসানসিতে। সেবছরও পালিত হয়নি রথযাত্রা।

১৬১৭ তে আবার মন্দির আক্রমণ করেন কল্যাণ মল। কিন্তু সেবারেও বিগ্রহ নিয়ে পুরোহিতরা চলে যান চিলিকার গুরুবাইগড়ে। বিগ্রহের ক্ষতি করতে পারেনি আকবরের স্নেহভাজন কল্যাণমল। কিন্তু রথযাত্রা বন্ধ থাকে ওই বছর।

ও হ্যাঁ, এই আকবরকেও আজকাল নাকি "সেকুলারিজমের পরাকাষ্ঠা" দেখানোর চেষ্টা চলছে!

৫) মুSলিম সুবেদার আহমদ বেগের নেতৃত্বে মন্দিরের ওপর আবার আক্রমণ নেমে আসে ১৬২১ সালে। বিগ্রহ লুকিয়ে ফেলা হয় বেনাপুরের অন্ধেরিগড়ে। পরে দারুব্রহ্মকে নিয়ে যাওয়া হয় খুড়দার গোড়ামনিত্ৰী গ্রামে। দুই বছরের জন্য বন্ধ রাখতে হয় রথযাত্রা।

৬) ১৬৯২। আক্রম খানের আক্রমণের জন্য দীর্ঘ ১৩ বছর বন্ধ রাখতে হয় রথযাত্রা। বিগ্রহ লুকিয়ে রাখা হয় প্রথমে খুড়দার বিমলা মন্দিরের পেছনে, পরে চিলিকার পাশে গোড়াকোকালা গ্রামে এবং শেষে বেনাপুরের বড় হাঁটুয়াদা গ্রামে। ঐখানেই ১৭০৭ সাল পর্যন্ত রাখা হয় বিগ্রহ।

৭) ১৭৩১-এ মুহাম্মদ তকি খান (ওড়িশার নায়েব) মন্দির আক্রমণ করেন। পুরোহিতরা বিগ্রহ নিয়ে যান চিলিকার কঙ্কনশেখরী কুড়ায়, নাইরির হরিস্বর মন্দিরে এবং শেষ পর্যন্ত চিকিলি গ্রামে। বন্ধ থাকে রথযাত্রা।

তকি খান দ্বিতীয়বার মন্দির আক্রমণ করেন ১৭৩৩ সালে।সেবারেও বিগ্রহ লুকিয়ে ফেলা হয় হাতিবাড়ি পাহাড়ের কাছে মারদা মন্দিরে। ঐখানে গোপনে পূজা হয় দীর্ঘ দুই বছর। ১৭৩৩-১৭৩৫ পর্যন্ত তিন বছর আবার বন্ধ থাকে রথযাত্রা।

হ্যাঁ, ধর্মের নামে মন্দিরে ঢুকতে না দেওয়া হয়তো আপনার প্রগতিশীল ভাবনার পরিপন্থী মনে হতেই পারে। কিন্তু একবার ভাবুন ঐ মানুষগুলোর কথা, সেই পুরোহিতের কথা, যিনি জ্ঞানব্যাপী মসজিদের সামনের কুয়োতে বিশ্বনাথের শিব লিঙ্গ সমেত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিগ্রহকে রক্ষা করতে, বিধর্মী শাসকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে। ঐ হাজার হাজার পুরোহিত ও সন্ন্যাসীদের কথা যারা হিংস্র হানাদারের নির্মম তলোয়ারের সামনে নিরস্ত্র দাঁড়িয়ে ছিলেন, নিজেদের রক্ত দিয়ে মন্দিরকে বাঁচাতে।

আপনি প্রগতিশীলতার ধ্বজা ধরে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, কিন্তু প্রশ্ন তোলার আগে এঁদের আত্মত্যাগটার কথাও মনে রাখবেন।

জয় জগন্নাথ

তথ্যসূত্র: Invasions on the Temple of Lord Jagannath, Puri - Odisha.gov.in
Painting: Raga Panchama
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: Paulami Pal