বাড়ির পুরাতন ভৃত্যকে চারি অক্ষরের গালি দিবার পর বিমান একদিন তাহার গৃহশিক্ষকের উপরেও ঐ গালি প্রয়োগ করিল। এইরূপে বাল্যকাল হইতেই বিমানের মধ্যে সাম্যবাদের লক্ষণগুলি একটু একটু করিয়া ফুটিয়া উঠিতেছিল। পিতা রকেট বিশ্বাসের নিকট হইতেই বিমান সাম্যবাদের প্রাথমিক পাঠ লাভ করিয়াছিল। বিমানের বদ্ধমূল ধারণা জন্মিয়াছিল যে শ্রমজীবী মানুষের দাবী জগতের নিকট পৌঁছাইতে হইলে শিক্ষিত লোক চাই। বিমানের বালক মনে তখন প্রশ্ন উঠিয়াছিল যাহারা শিক্ষালাভ করিবে তাহারা শ্রম করিবে কি প্রকারে? একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কলকারখানায় যাওয়া কিরূপে সম্ভব? প্রশ্নের সমাধান করিতে না পারিয়া বিমান তখন পিতা রকেটের নিকট উপস্থিত হইলে রকেট বিশ্বাস তাহাকে বুঝাইয়া দিলেন যে বিদ্যালাভও একপ্রকার শ্রম বটে। এই উত্তর বিমানের অত্যন্ত মনঃপূত হইল এবং বিমান একমনে বিদ্যাভ্যাস করিতে লাগিল। ক্রমে ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাইয়া বিমান বামপন্থী ছাত্রদলের কার্যক্রমের সহিত যুক্ত হইয়া পড়িল। বিমান বুঝিল, সাম্যবাদের পথ সমগ্র বিশ্বে ব্যাপৃত, তাই বেলগ্রেডের শ্রমিকদের বঞ্চনা আর বেলঘরিয়ার শ্রমিকদের বঞ্চনা তাহার নিকট একাত্ম হইয়া মূর্ত হইল।
এইরূপে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করিয়া বিমান তাহার পিতার ব্যবসায়ে যোগ দিল। রকেট বিশ্বাসের ক্যাপসুল তৈরির ছোটো কারখানা ছিল, ব্যবসায় কিঞ্চিৎ মন্দা চলিতেছিল। তদুপরি অন্যান্য ক্যাপসুল বানাইবার কোম্পানিগুলির সহিত প্রতিযোগিতায় রকেটবাবুর কারখানা পিছাইয়া পড়িতেছিল। কারখানার কাজ বুঝিতে শুরু করিয়া বিমানের মনে হইল অন্যান্য কোম্পানির শ্রমিকদের তুলনায় তাহার কোম্পানির শ্রমিকগণ আরামে আছে। আরাম করিবার অধিকার শ্রমজীবীগণের ন্যায্য দাবী, তাই অন্যান্য কারখানার শ্রমিকগণকে বিমান তাহাদের দাবী সম্পর্কে অবগত করাইতে লাগিলেন। কয়েক বৎসর পর দেখা গেল অন্যান্য কারখানাগুলিতে লকডাউন শুরু হইয়া গিয়াছে। সেই সকল কারখানা হইতে বাছিয়া বাছিয়া দক্ষ কারিগর লইয়া বিমান তাহার নিজ কারখানায় নিয়োগ করিতে লাগিলেন। বিমানের কোম্পানির প্রতিযোগিতা কমিল অথচ দক্ষতা বাড়িল। এইরূপে বিমান অবশেষে প্রকৃত সাম্যের প্রতিষ্ঠা করিল!