tarun malakar's Album: Wall Photos

Photo 152 of 265 in Wall Photos

চীনের ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার ঃ আপনিও চীনা প্রোপাগান্ডা নিউস- নেটওয়ার্ক এর খপ্পরে পড়েন নি তো ?

যুদ্ধ জিনিস টার ধরন ধারন গত শতকে অনেকটাই পালটেছে, এখন তার একটা মেইন আরম হল ঃ ইনফরমেশন ওয়ার ফেয়ার, ছোট করে বললে, যে কোন ইনফরমেশন কে ভেঙ্গেচুরে প্রেসেন্টেশন টা একটু পালটে, একটু ভাষা বদলে বললে; অনেক সময় তার মানে টা অন্য রকম দাঁড়ায়, আর এটাকে ইংরেজি তে বলে ‘ডিস ইনফরমেশন’।

মানে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল খবর প্রচার করা যাতে যুদ্ধের সময়ে শত্রুর মনে একটা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, সাইকলজিকালি সে আসল লড়াই টা লড়ার আগেই মনে মনে হেরে ভূত হয়ে যায়। এই যুদ্ধ টা চোখে দেখা যায়না, তবে চোখ কান খোলা রাখলে ইনফরমেশন আর ডিস ইনফরমেশন এর পার্থক্য করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

এটা প্রোপাগান্ডা ওয়ার এর একটা পপুলার টেকনিক। মিডিয়া কে কিনে নিজের পক্ষের খবর গুলো বেশি বেশি দেখান, বারবার শোনানো আর নিজের বিরুদ্ধে যায় এমন খবর গুলো ভুল ইন্টারপ্রেট করে শোনানো আর নয়ত চেপে যাওয়া এই প্রোপাগান্ডা ওয়ারফেয়ার এর অন্যতম উপায়।

এই মুহূর্তে আমরা চীনের সাথে যুদ্ধের পরিস্থিতি তে দাঁড়িয়ে এই জিনিস টা আরও ভাল ফিল করতে পারব যদি চোখ কান খোলা রেখে চলি।
প্রথমেই জানিয়ে দিই, আমরা যাদের সাথে কনফ্লিক্ট এ জড়িয়েছি, সেই চীন এই ইনফরমেশন যুদ্ধ টা আমাদের চেয়ে অনেক ভাল খেলে, সেটা ছোট করে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
এর মূল কারন ভারতীয় গনতন্ত্র কে ম্যানিপুলেট করা চীনের এক নায়ক তন্ত্রের চেয়ে ইজি। তার কারন আমরা ‘ব্যক্তি স্বাধীনতায়’ বিশ্বাসী। গণতন্ত্রে যে যার মনের কথা খুলে বলতে পারে, এতে বাধা নেই তা সে মনের কথা ‘ডিস ইনফরমেশন’ এর রুপ ধরে এলেও, কিন্তু ফ্রি স্পিচ আমাদের দেশে অপরাধ নয় আর এরা এইটার সুজগ নিয়ে নিজের উদ্দেশ্য পূরণ করে; আবার চীন হল চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির একনায়কতন্ত্র।
সেখানে সেই একনায়ক এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলা বে আইনি, সে সত্যি কথা হলেও কারন সেখানে ফ্রিডম অফ স্পীচ বলে কিছু নেই। তাই ওদের সিস্টেম টাই এমন যে এটাকে ম্যনিপুলেট করা প্রায় অসম্ভব।

আপনি এমন অনেক লোক পাবেন যে ভারতে বসে চীনের হয়ে কথা বলছে এবং ভারত বিরুদ্ধ কথা বলছে অথচ আপনি এরম লোক প্রায় পাবেন ই না যে চীনে বসে চীনের সরকারের বিরুদ্ধে ভারতের হয়ে কথা বলছে এবং এখনো সে খুন হয়ে যায়নি।

উচিৎ অনুচিত এর কথা বলছিনা কিন্তু ডিক্টেটর শিপ এর সাথে গণতন্ত্রের পার্থক্য টা এখানেই আর এটার সুযোগ নিয়ে চীন তার ইনফরমেশন প্রোপাগান্ডা খেলে সাধারন নাগরিক দের আতঙ্কিত করতে চাইছে যাতে ভারত সরকারের ওপর ওদের সাথে রফা করার, ওদের দাবী মেনে নেওয়ার একটা পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি হয়।

এটা মুলত দু ভাবে চীন করেঃ
১। প্রত্যক্ষ প্রচারঃ মিডিয়া এর মাধ্যমে চীনের হয়ে চীনের পারস্পেক্টিভ টা প্রচার করা। আপনি হয়ত জানেননা, এটা করতে চীন বছরে ২ বিলিয়ন ডলার খরচা করে বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া হাউস এর ওপর। টাকা খাইয়ে তারা বিদেশী মিডিয়া গুলোকে দিয়ে নিজেদের প্রচার চালায় যাতে সেটা বিদেশী দের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয় আর লোকে সহজে বিশ্বাস করে।
খুব রেয়ারলি হয়তো আপনি চীনের কোন নিন্দেমন্দ শুনবেন, বেশীরভাগ টাই চীনের স্তুতি, কারন এটা করতে তারা টাকা পায়।
অথচ চীনে কিন্তু বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম নিষিদ্ধ, কিছু কিছু বিদেশী ম্যগাজিন নিষিদ্ধ, কখনো কন্ট্রোভারসিয়াল নিউজ এর সময় টিভি এর সিগন্যাল আউট হয়ে যাওয়াও ওখানে কমন ব্যাপার।

২। পরোক্ষ প্রচারঃ আজকাল ডিরেক্টলি প্রচার করলে লোকজন কায়দা টা ধরে ফেলে তাই আরেকটা নতুন খেলা শুরু হয়েছে, সেটা হল চায়না এর ভাল দিক গুলো তুলে ধরা আর আমাদের ভাল দিক গুলো চেপে যাওয়া।

যেমন ধরুন কিছুদিন আগে দেখলাম একটি জনপ্রিয় বাঙলা নিউজ পেপার চীন আর ভারতের সামরিক শক্তির তুলনা করেছে, সেখানে প্রায় প্রতিটি কলাম এ চীনের কত বেশি আছে আর আমাদের কত কম আছে সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
উদাহরন ঃ যেমন ধরুন ওরা লিখবে চীনের কাছে আছে ৩৫০০ ট্যাঙ্ক, কিন্তু এটা বল্বেনা যে তার অর্ধেক ই অতি পুরন মডেল আর প্রাগৈতিহাসিক টেকনোলজি র।
ওরা বলবে ভারতের কাছে আছে ৬০ এর দশকের মিগ, কিন্তু এটা বল্বেনা যে আমাদের কাছে তেজস আছে, রাফাল আছে।
ওরা বলবে চীনের পদাতিক সৈন্য সংখ্যা ভারতের চেয়ে বেশি কিন্তু এটা বল্বেনা যে রিসার্ভ আর্মি চীনের অনেক কম আর দুটো মিলিয়ে (আক্টিভ আর রিসার্ভ) ভারতের সৈন্য সংখ্যা চীনের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতের আর্মি বিশ্বের অন্যতম লারজ স্ট্যান্ডিং আর্মি।

সি জি টি এন বা চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আসাধারন পে প্যাকেজ এ কর্মী নিয়োগ করে যেখানে সারা পৃথিবী মিডিয়া এর বাজেট কে সিরিয়াসলি নেয়না। এখানে কিন্তু ওরা অনেক এগিয়ে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও এর প্রভাব মুক্ত নয়, ওরা ওয়ান টাইম ইনভেস্ট করে একসাথে তিন চারটে নামকরা ফরেন নিউজপেপার এ ওদের প্রোপাগান্ডা একসাথে একদিনে পাবলিশ করে যাতে ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য হয়।

নিচে ছবিতে দেখুন চায়না ওয়াচ নিউজ পেপার সাপ্লিমেন্ট এর গ্লোবাল রীচ।

মানে ভারতে প্রচার করতে হলে ভারতীয় কোন নিউজ এজেন্সি কে দিয়ে করায়, ইউ কে তে প্রচার করতে হলে কোন ব্রিটিশ এজেন্সি কে দিয়ে করায় ফলে আপনি মনে করেন এটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট নিউজ কিন্তু আদতে তা নয়।

পিপলস লিবারেশন আর্মি এটাকে বলে মিডিয়া ওয়ারফেয়ার।

একটা রিপোর্ট বলছে ‘the daily telegraph’ বছরে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার পাউন্ড পায় শুধু মাসে একটা করে চায়না এর আরটিকল প্রকাশের জন্য।
আবার ‘daily mail’ এর সাথে ‘the people’s daily’ এর সাথে এগ্রিমেন্ট হয়েছে বলে শোনা গেছে। চীন শুধু আমেরিকান মিডিয়া র পেছনে ২০১৭ য় খরচ করে ২০.৮ মিলিয়ন ডলার।

তাহলে বুঝে দেখুন খবর পরিবেশনের নামে একটা সাইকলজিকাল গেম খেলছে চায়না, পাব্লিক কে ভয় দেখিয়ে আতঙ্কিত করে ওরা যুদ্ধের আগেই যুদ্ধ জিতে নিতে চায় আর এই ব্যাপারে আমাদের দেশের কিছু অবৈধ চীনা সন্তান তাদের সাহায্য ও করে ফ্রি তে।
তাই কোন খবরে ১০০% চোখ বুজে বিশ্বাস করার আগে নিজের কমন সেন্স টাও ইউজ করবেন, অন্য রাইভাল খবরের সাথে তুলনা করবেন, একটা খবর বিশ্বাস করার আগে ১০ টা আলাদা আলাদা অপিনিওন নেবেন।

চীন হচ্ছে হাতির মত ঃ হাতি কা দাঁত খানে কে আলগ আউর দিখানে কে আলগ।
হ্যাঁ ঠিক এতটাই কষ্ট করতে হবে, আমার মতে ভুল খবর পড়ে বিভ্রান্ত হয়া এবং লোকজন কে আতঙ্কিত করার চেয়ে সেটা ভাল নয়তো আপনি
“পিছিয়ে থাকবেন, পিছিয়ে রাখবেন”। বাকিটা বুঝে নিন।