tarun malakar's Album: Wall Photos

Photo 184 of 265 in Wall Photos

**অপারেশন কাহুতা**
... ... ...
এসপিওনেজ তথা গুপ্তচরবৃত্তি পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন পেশাগুলির একটি। দেশ, সভ্যতা, সাম্রাজ্য, সংস্থা যুগে যুগে নিজ নিজ শক্তির বিস্তার এবং বিজাতীয় শক্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার স্বার্থে এই পেশাটিকে ব্যবহার করে এসেছে। আমাদের দেশ তার ব্যতিক্রম নয়।

ভারতবর্ষের প্রাথমিক গোয়েন্দা সংস্থা দু'টি - যথা র' এবং আই.বি।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আই.বি তথা ইন্টালিজেন্স ব্যুরো-ই ভারতের ইন্টার্নাল এবং এক্সটার্নাল - দু' ধরণের ইন্টালিজেন্স কালেকশন এবং অপারেশনের জন্য নিযুক্ত ছিল। কিন্তু ১৯৬২ এবং ১৯৬৫ তে ভারত-চীন ও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে আই.বির ব্যর্থতার কারণে পরবর্তীতে ভারতীয় নেতৃত্ব এক্সটার্নাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির প্রয়োজন অনুভব করেন।
ফলে স্পাইমাস্টার রামেশ্বরনাথ কাও এর নেতৃত্বে এবং ইন্দিরা গান্ধীর স্বীকৃতিতে ১৯৬৮ তে গড়ে ওঠে ভারতের বহিঃগোয়েন্দা সংস্থা তথা রিসার্চ & অ্যানালাইসিস উইং, সংক্ষেপে র'(R&AW)।

এরপর থেকে বিদেশের মাটিতে অগণিত অপারেশনের মাধ্যমে, অগণিত বলিদানের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সার্বভৌমতা এবং অস্তিত্ব রক্ষার কারিগর হিসেবে র' তার অপরিসীম ভূমিকা পালন করে আসছে।
বলাইবাহুল্য, অপারেশন কাহুতা, সেই দুঃসাহসী অভিযানগুলিরই একটি।

১৯৭৪ এ পোখরানে ভারতের পরমাণু বোমা টেস্টের পরবর্তীতে পাকিস্তানের অবস্থা আক্ষরিক অর্থেই হয়ে যায় পাগল কুকুরের মতো। "প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব কিন্তু পরমাণু বোমা আমরা বানাবোই" - মনে পরে এক পাকিস্তনী নেতৃত্বের এই উক্তি? এই সেন্টিমেন্ট পাকিস্তানের বরাবরই ছিল, যার বাস্তবায়ন দেখা যায় পাকিস্তানের নেতৃত্বের প্রোজেক্ট-৭০৬/৭২৬ এর সূত্রপাতের মাধ্যমে যা অনেকে আমেরিকার ম্যানহ্যাটন প্রোজেক্টের সাথে তুুলনা করে থাকেন।

বিজ্ঞানী এম.এ. খান ছিলেন এই প্রোজেক্টের পুরোধা। তবে শুরুতে এই প্রজেক্ট যে মারণাস্ত্র পারমাণবিক বোমা তৈরীর কাজে নিয়োজিত হবে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে ছিল। ফলে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে ফ্রান্সের সাহায্য পেলেও পরবর্তীতে পাকিস্তানের অভিসন্ধি খানিক উপলব্ধি করতে পারলে ফ্রান্স সরে আসে। অন্তত বিশেষজ্ঞরা এই কথাই বলে থাকেন।

বলাইবাহুল্য ভারতের জন্য এটি মোটেই ভালো খবর ছিল না। তার উপর কোথায় এই খুনে পরিকল্পনা প্রসূত কাজটি করা হচ্ছে সে সম্বন্ধে আমেরিকা, ইজরায়েল কিংবা ভারত কেউই অবগত ছিল না। ভারতের গোয়েন্দা নেতৃত্ব এরপর এই কাজটি সম্পন্ন করতে পাকিস্তানে থাকা বড় সংখ্যক এজেন্টদের নিয়োগ করেন।
'র' এর পাকিস্তান নেটওয়ার্ক এরপর সে দেশের সমস্ত সায়েন্টিফিক প্রোজেক্ট, সেইসব প্রোজেক্টের স্থানগুলি এবং তাতে যুক্ত ব্যক্তিদের গতিবিধির উপর পাখির চোখ রাখা শুরু করেন। তা থেকে বাদ পড়েনি রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত কাহুতা নামের সেই স্থানটি। এখানেই চলছিল পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার প্রোজেক্টের সমস্ত কাজ।

র' এর গোয়েন্দারা এই স্থানের সন্ধান পেলেও এখানে যে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরীর কাজ চলছে সে সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন না। নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের ভেতরে অনুপ্রবেশ(ইনফিলট্রেট) করার কাজও এককথায় অসম্ভব ছিল। ফলে ভারতীয় গোয়েন্দারা একটি ফন্দী আঁটলেন। প্ল্যান্টটির সবচে কাছে যে সেলুনে বিজ্ঞানীরা চুল কাটতে যেতেন সেই সেলুনে তারা গোপন অভিযান চালান এবং সেখান থেকে চুলের স্যাম্পল এনে পরীক্ষার জন্য সমস্তটা ভারতে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষার ফলে সেই চুলগুলিতে রেডিয়েশন ট্রেস করতে পেরেই ভারতীয় নেতৃত্ব নিশ্চিন্ত হন যে এই কাহুতা সেই জায়গা যেখানে পাকিস্তান তার পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কার্যে রত।

তবে এই পর্যন্ত থেমে থাকলে চলছিল না। ভারতের উদ্দেশ্য ছিল এই প্রোজেক্ট পুরোপুরি বাঞ্চাল করে দেওয়া। বলা হয়, সেই লক্ষ্যেই সেখানে কার্যরত এক বিজ্ঞানীকে তারা টাকার বিনিমিয়ে প্রায় কিনেই ফেলেছিলেন। সেই বিজ্ঞানী সেখানে চলতে থাকা সমস্ত তথ্য টাকার বিনিময়ে দিতে রাজী হয়ে যায়।

এই পর্যন্ত সমস্ত কিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই কী করলেন? জিয়া-উল-হক এর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে, তর্কের মাঝে মুখ ফস্কে তিনি বলে ফেলেন যে তাদের দেশে গোপনে কী চলছে তিনি সব জানেন। ব্যাস্! আর যায় কোথায়?? পাকিস্তানের বুঝতে একটুও দেরী লাগল না যে র' এর গোয়েন্দারা তাদের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের প্রোজেক্ট নাস্যাৎ করার কাজে পুরোপুরি লেগে আছে। ফলাফল যা হবার তাই হলো। মিশন অ্যাবর্ট! একটি হিরোইক মিশনের ট্র্যাজিক পরিসমাপ্তি। বলা হয় বেশ কিছু গোয়েন্দা মারা পড়েন এবং বাকিরা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। আর কী কী হয়েছে তা একমাত্র র' ই বলতে পারবে। কিন্তু র' এর সবচে দুঃসাহসী অভিযানগুলির তালিকায় 'অপারেশন কাহুতা'-র নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তবে ভারতের ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রইল এক মহামূর্খ প্রধানমন্ত্রীর যার পাড়ায় পাড়ায় ঝগড়া এবং দেশে দেশে সংঘাতের মধ্যে পার্থক্য করার মতো সামান্য বুদ্ধি ছিল না, যার মূর্খতার দাম দিতে হয়েছিল উচ্চপ্রশিক্ষিত, দেশের সেবায় নিয়োজিত ভারতের বীরপুত্র তথা র' এর সেই গোয়েন্দাদের।

অজানা অচেনা সেই সব গোয়েন্দাদের কন্টকদীর্ণ পথ প্রশংসার বরণডালায় আলোকিত হয়না, তাদের আত্মবলিদানের কাহিনী বন্দনাগানের ছন্দে ঝংকৃত হয়ে ওঠেনা।
তবে মোরারজি দেশাইয়ের মতো অকর্মণ্য মূর্খদের নাম প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় আজও জ্বলজ্বল করতে থাকে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে - এ দেশের এক দুর্ভাগ্য!
.
বি:দ্র:- কানে কানে বলে যাই, নিন্দুকেরা তো এও বলেন মোরারজি র' এর অনেক তথ্য নিজেই পাকিস্তানকে বিক্রি করেন এবং র' এর বাজেটও ৩০% কমিয়ে দেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের মূত্র পান করা এই প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের সর্বোচ্চ নাগরিক সন্মান নিশান-এ-পাকিস্তান এমনি এমনি তো আর পাননি। কী বলেন?

কলমেঃ রুদ্রাংশু রায়