Amit Rajpoot's Album: Wall Photos

Photo 15 of 31 in Wall Photos

নেপালের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক ঐতিহাসিক। ১৮৫০ কিলোমিটারের বিশাল সীমান্ত রয়েছে ভারত ও নেপালের মধ্যে তবুও ইন্দো-নেপাল সীমান্তে কোনো বেড়াজাল নেই। ভারতে প্রায় ২৫ লাখ নেপালী বসবাস করে, নেপালেও প্রায় ৬ লাখ ভারতীয় বসবাস করে। দুদেশের নাগরিক পাসপোর্ট ভিসা ছাড়ায় উভয় দেশে যাতায়াত করতে পারে, এমনকি নেপালের সীমান্তে বিএসএফ পর্যন্ত মোতায়েন করেনি ভারত। ভারতে নেপালীদের জন্য রয়েছে উন্মুক্ত চাকুরীর বাজার, এমনকি ভারতীয় সামরিক বাহিনীও নেপালীদের জন্য উন্মুক্ত। ১৯৫০ সালে যখন মাও সে তুং এর দখলদার কম্যুনিস্ট সরকার যখন অবৈধভাবে তিব্বত দখল করে নেয় তখন নেপাল সরকার ভয়ভীত হয়ে পড়ে ও ভারতের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। ১৯৫০ সালের ৩১ শে জুলাই ইন্দো-নেপাল ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সাক্ষরিত হলে পিছু হটে দখলদার কম্যুনিস্ট চিন সরকার। ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধে নেপাল প্রত্যক্ষভাবে ভারতকে সাহায্য করেছিল। বর্তমান নেপালের অর্থনীতি অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল, নেপালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ভারতের। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নেপালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প আঘাত হানলে ভারতই সবার আগে এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নেপালি পুলিশ বিনা উসকানিতে "অনুপ্রবেশের" দায়ে একজন ভারতীয় নাগরিক কে হত্যা করল, যেখানে নেপাল-ভারত সীমান্তে অনুপ্রবেশ বলে কিছু নেই, সীমান্ত দুইদেশের নাগরিকের জন্যই সর্বদা উন্মুক্ত। আবার নেপালের পার্লামেন্টে ভারতের অংশকে নেপালের মানচিত্রে জুড়ে দিয়ে তা সর্বসম্মতি ক্রমে পাশ হয়ে গেল। তার দুদিন পরেই চিন যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ভারতীয় সেনার উপর অতর্কিত হামলা করল, এর পরদিনই আবার জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানি সেনারা গোলা ছুড়তে শুরু করল। মাত্র একসপ্তাহের মধ্যেই এতগুলো ঘটনা একসঙ্গে ঘটল, সুতরাং নেপাল যে চিনের উসকানিতেই সুপরিকল্পিত ভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে তা স্পষ্ট।

চিন-ভারত সম্পর্কে ভাঙন ধরিয়ে বেইজিং এর সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পেছনে বড় অবদান রেখেছে নেপালের প্রধানমন্ত্রী তথা কম্যুনিস্ট পার্টি অব নেপালের চেয়ারম্যান কে পি ওলি। কে পি ওলির কম্যুনিস্ট সরকার নেপালের রাষ্ট্রধর্ম 'হিন্দু' বাতিল করেছে, নেপালী জাতীয়তাবাদের নামে নেপালে ভারতবিরোধী ও চিনাপন্থী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। নেপালের কম্যুনিস্ট পার্টির মাধ্যমে চিন নেপালে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে, ভারতকে হটিয়ে চিন নেপালের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ হতে চায়। নেপালের বিমানবন্দর, জলবন্দর গুলিতে চিন ব্যাপকহারে বিনিয়োগের মাধ্যমে নেপালের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে। কে পি অলি রাজনীতির স্বার্থে নেপালে চিনাপন্থী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে, জনগণের সামনে ভারতকে খলচরিত্রে রূপদান করেছে, যেহেতু বিরোধীদল নেপালি কংগ্রেস পার্টি ভারত সমর্থিত তাই কে পি অলি চিন কে বেছে নিয়েছে, আর কম্যুনিস্টরা চিন কে সমর্থন যোগাবে এতে আর আশ্চর্য কী?

নেপাল কেন চিনের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? নেপাল ছোট দেশ হলেও ভৌগলিক অবস্থানের বিচারে চিনের কাছে নেপালের গুরুত্ব ব্যাপক। নেপালের আয়তন ছোট হলেও নেপালের সঙ্গে ভারত ও চিন উভয় প্রান্তের ভৌগলিক সীমান্ত প্রায় দুইহাজার কিলোমিটারের বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সুতরাং যুদ্ধ হলে নেপালের ভূমি ভারত ও চিন উভয় দেশেরই প্রয়োজন হবে। তাই নেপালের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা উভয় দেশের জন্যই জরুরী। ভারতের জন্য মরার উপরে খাড়ার ঘা হল শিলিগুড়ি করিডোর, যা চিকেন'স নেক নামে পরিচিত। শিলিগুড়ি করিডোর হল মুরগীর গলা আকৃতির ভারতীয় সীমানার এমন একটি এলাকা যার দুইপাশে রয়েছে নেপাল ও বাংলাদেশ সীমান্ত। দুইদেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ভারতীয় অঞ্চলটির প্রস্থ মাত্র ২৫ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সঙ্গেই ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাকি সাতটি রাজ্যের সংযোগ রয়েছে যাকে সেভেন সিস্টারস বলা হয়। সুতরাং এই শিলিগুড়ি করিডোর যদি চিন তার অধীনস্থে আনতে পারে তবে ভারতের বাকি রাজ্যের সঙ্গে সেভেন সিস্টারস এর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তানের মত দুটো আলাদা খন্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে ভারত। ফলে ভারত দুর্বল হয়ে পড়বে ও চিন সহজেই সেভেন সিস্টারস কে তাদের অধীনস্থ করবে। এটায় হল চিনের মাস্টার প্লান। চিনের যেমন লাদাখের প্রতি লোভ রয়েছে, তেমনি রয়েছে অরুণাচল প্রদেশের প্রতিও, সেইসঙ্গে সুযোগ পেলে সমগ্র সেভেন সিস্টারস কেই গিলে খেতে চায়বে চিন, আর তার প্রথম পদক্ষেপ হবে শিলিগুড়ি করিডোর দখল। যার জন্য কেবল নেপাল নয়, বাংলাদেশের জমিরও প্রয়োজন পড়বে চিনের। তাই চিন কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গেও ঘনিষ্ট সম্পর্কের নামে চিনা সাম্রাজ্যবাদ কায়েমে উদগ্রীব। ভারত বিরোধী মনোভাবের দরুণ ও চিন পাকিস্তানের পরম বন্ধু এই সম্পর্কের ভিত্তিতে বাংলাদেশেও চিনা অনুপ্রবেশ ঘটেছে, কিন্তু জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিরোধীতার জেরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের বুকে চিনের বন্ধু হিসাবে এক পাকিস্তান ছাড়া দ্বিতীয় আর কেউ নেই। যদিও পাকিস্তানকে চিনের বন্ধু না বলে রক্ষিতা বলায় যথার্থ হবে।

নেপালের সঙ্গে ভারতের বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে কালাপানি এলাকা, যা উত্তরাখণ্ড সীমান্তে অবস্থিত, যে অঞ্চলটি নেপাল তাদের মানচিত্রে যুক্ত করেছে। সেখানে চিকেন'স নেক বা শিলিগুড়ি করিডোর এলাকা নেপালের আরেক প্রান্তে হলেও কালাপানি বিরোধের জেরে নেপালের কম্যুনিস্ট সরকার এই এলাকায় চিনকে সুবিধা পাইয়ে দিতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকহারে মুসলিম জনগোষ্ঠী হিলি বন্দর দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের ঐ নির্দিষ্ট এলাকায় অনুপ্রবেশ করে জনবসতি গড়ে তুলছে। ফলে ক্রমেই শিলিগুড়ি করিডোর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে পরিণত হবে, ফলে উভয় সংকটে পড়বে ভারত, অর্থাৎ বাইরে শত্রু ঘরেও শত্রু এমন অবস্থা হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে চিন-ভারত বড় কোনো যুদ্ধের দিকে এগুবে বলে মনে করি না। কারণ দুইদেশই করোনা ভাইরাসের ফলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত। তাছাড়া আমেরিকা সহ বহুদেশ করোনা ভাইরাস ছড়ানোর জন্য চিন কে সরাসরিভাবে দায়ি করে থাকে। চিন মোটামুটি এখন বিশ্বে একঘরে অবস্থায় আছে, এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধে জড়ালে ক্ষতির ভাগ চিনের উপরেই বেশি বর্তাবে। কুটনৈতিক ভাবে আমেরিকা চিনকে পিষে ফেলার সুযোগ পাবে, এমনকি প্রত্যক্ষ যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া ভারত তো আর সেই ১৯৬২ সালের নেহরুর দেশ নয় যে মাথা নিচু করে থাকবে। ৬২ সালে ভারতের কোনো পারমানবিক শক্তি ছিল না। চিনের ৮০ হাজার সেনার বিপক্ষে ভারতের মাত্র ১০ হাজার সেনা যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছিল নেহরুর অদূরদর্শিতায়। নেহরু ৬২ সালের পূর্বে কখনোই চিনকে শত্রুদেশ বলে গণ্য করেনি বরং চিনের কাছে নতজানু হয়ে থেকেছে। কিন্তু আজ ভারত চিনকে ধ্বংস করে দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে।

সর্বশেষ চিন-ভারত লড়াইয়ে ২০ জন ভারতীয় সেনার বিপরীতে ৪৩ জন চিনা সেনা হতাহত হয়েছে। মজার ব্যাপার হল, শত্রু দেশের মিডিয়া ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনা বিশ্বাস করলেও চিনা সেনা হতাহতের খবর বিশ্বাস করতে পারছে না! যেখানে তারা ভারতীয় ২০ জন সেনা নিহতের খবর একই সংবাদমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করেছে, যারা বলছে ৪৩ জন চিনা সেনাও হতাহত হয়েছে।

আর চিনের বলে বলীয়ান শি জিং পিং এর পুতুল হয়ে থাকা নেপালের কম্যুনিস্ট সরকার যদি তাদের মানচিত্রে ভারতের কিছু জমি যোগ করে আনন্দ পেয়ে থাকে তো পেতে দিন, বাস্তবে সে সামর্থ্য নেপালের কখনোই হবে না। তবে ভারতের দুর্বলতম পয়েন্ট হল শিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন'স নেক, এই অঞ্চলটিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও যেকোনো প্রকার দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের বীজ সমূলে উৎপাটন করতে হবে।

✍ শ্রীমতী স্বপ্না রায়