Asim kr Dey's Album: Wall Photos

Photo 18 of 22 in Wall Photos

*তিলকের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা ।*
*_ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।_*

_বাল গঙ্গাধর তিলক_ , যিনি ভারতবাসীর মানসচর্চায় ' _লোকমান্য_ ' নামে অভিহিত, তাঁর মৃত্যুর পর কোনো একটি স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন ডাক্তারজী, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা _ডাক্তার কেশব বলিরাম হেডগাওয়ার_ । জনৈক বক্তা সেখানে বললেন, আমরা তিলকজীর পবিত্র পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলব। ডাক্তারজী তাঁর বৌদ্ধিকে সেই সূত্র ধরে বললেন, "তিলকজী-র পদচিহ্ন তো ১৯২০ সালে শেষ হয়ে গেছে। এরপর তো আর তাঁর পদচিহ্ন পাব না। তখন কী করব? থেমে যাব? না তিলকজী-র পদচিহ্ন নয়, তাঁর প্রেরণা নিয়ে চলব এবং নতুন রাস্তা তৈরী করে নেব।"

হ্যাঁ, নতুন রাস্তাই তৈরি করে নিতে হয়, নব রাজপথে সবলে-সম্মানে রাষ্ট্রীয়-লক্ষ্যে এগোতে হয়; সঙ্গে থাকে পূর্বসূরীদের জ্বেলে যাওয়া মশাল; যুগের সঙ্গে, পরিস্থিতির সঙ্গে, প্রয়োজনের সঙ্গে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া এবং এগিয়ে চলার নামই 'চরৈবতি'। কোনো একজন রাষ্ট্রবাদী মানুষের মৃত্যু না হয়ে যদি আরও অনেক অনেক কাল সবল ও সুস্থ শরীরে ও মানসে বেঁচে থাকতেন, তবে কোন্ পথে, কোন্ দর্শনে, কোন্ ব্রতে তিনি এগিয়ে চলতেন, তার যথার্থ স্বরূপসন্ধানের খোঁজ করা এবং তার বাস্তবায়নের নামই দেশব্রত, জাতীয়তাবাদের কৃত্য এবং ভারতবোধ। কোনো ভারততাত্ত্বিক, ভারতীয় মনীষা জীবদ্দশায় যে যাবতীয় কর্মদ্যোগ নেন, যে যোজনা গ্রহণ করেন, যে পাকাপোক্ত পথ রচনা করে যান, তাঁর মানসসরোবর মন্থন করেই তাঁর জাগতিক মৃত্যুর পর নতুনের পথে এগোতে হয়। কিন্তু সেই ব্যক্তিত্বের মৃত্যু হয় না, এভাবেই তিনি বেঁচে থাকেন, এভাবেই তিনি আলো দেন, এভাবেই পথ দেখান।

সেদিন ডাক্তারজীর কথা নিশ্চয়ই কিছু যুবক-কিশোর অনুগামীরা নিতে পেরেছিলেন। আজকের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এত বিস্তৃতি তো সেই কারণেই! ডাক্তারজী মহাপ্রয়াণের পর তাঁর অপূর্ণ সম্ভাব্য কাজ কী হতে পারতো -- তার সামূহিক বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন হয়েছে বলেই না সেই সংগঠন এতদূর বিস্তৃতি লাভ করেছে!

পুব বাংলায় একটি প্রচল কথা ছিল 'আগ-দেখা'। লোকমান্য তিলকেরা, ডাক্তারজীরা আগ-দেখতে পারতেন, যারজন্য তাদের বলা হয় ' *ভিশনারি আর্কিটেক্ট* '। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ঘটনা প্রবাহের অনুপুঙ্খ বিচার করে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার নাম, সময়োপযোগী প্রস্তুতি নেওয়ার নামও *নব-জ্যোতিষচর্চা* । এরজন্য তিলকজীকে কোনো অভূতপূর্ব বিষয়ে ঘোষণা করে যেতে হয় না, এরজন্য ডাক্তারজীকে নবতর বিষয়ে লিখেও যেতে হয় না। এই ঘোষণা করবেন, এই লিখন লিখবেন, তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ দেশব্রতী মানুষ, তাঁদের উত্তরসূরী। আমাদের মধ্যে তাঁরা স্ফুলিঙ্গ জ্বালাতে আসেন। তাঁদের শুভ্র-আত্মা আমাদেরই মধ্যে দিয়ে কাজ করেন। আর কাজ করেন বলেই রাষ্ট্রবাদী অনেকানেক কর্মকর্তা বহুবিধ বিরাট কাজ সমাধা করতে পারেন অনায়াসে। যে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র উপদেশ তারা দিয়ে যান নি, সমকালীন কল্পনাতে বিন্দুমাত্র বোধের উদয়ও হয় নি, তা তাঁদের আদর্শে রূপায়নের নামই তাঁদের বেঁচে থাকা।

কেশব গঙ্গাধর তিলক বা *বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যু-শতবর্ষ* এই বছর। ১৮৫৬ সালের ২৩ শে জুলাই তাঁর জন্ম, আর ১৯২০ সালের ১ লা আগষ্ট তাঁর প্রয়াণ। একজন মহান পণ্ডিত ব্যক্তি, আন্তরিক সমাজ সংস্কারক তিনি। ব্রিটিশ ভারতের একেবারে প্রথম দিকের স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর স্বাধীনতাস্পৃহা ব্রিটিশদের এতটাই ভীত করে তুলেছিল যে, তাকে 'ভারতীয় অস্থিরতার পিতা' বলে অভিহিত করলেন ব্রিটিশ শাসক। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ' *লাল-বাল-পাল* ' -- এই ত্রয়ীর অন্যতম তিনি। *পাঞ্জাবের লালা লাজপৎ রায়, মহারাষ্ট্রের বাল গঙ্গাধর তিলক এবং বাংলার বিপিনচন্দ্র পাল একই নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করতেন ভারতপ্রেমী মানুষ।* তিনি ছিলেন মানুষের দ্বারা গৃহীত, আদৃত নেতা, তাই তাঁকে সম্বোধন করা হত 'লোকমান্য' বলে। তাঁর প্রয়াণ দিবসে ' *দেশের মাটি* ' রাষ্ট্রবাদী গোষ্ঠীর তরফ থেকে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।