Sandy Blade's Album: Wall Photos

Photo 7 of 17 in Wall Photos

দেশভাগের পটভুমিকায় রচিত, বেস্টসেলার ফিকশন থ্রিলার।
.
"নিশির ব্যাটা থেকে শালীচরণ"
.
.
সংগ্রহ করুন
.
.
"নিশিকান্ত দৌড়চ্ছে, প্রবল জোরে দৌড়চ্ছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে অলিম্পিকে মিলখা সিং! ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে "ভাগ নিশি ভাগ"!
"বাবা, ও বাবা। বাবাগো"
করুণ শিশুকন্ঠের চিৎকার শোনা গেল। একমূহুর্ত পিছনে তাকাল নিশি, ছোট ছেলে জ্যোতিকে দেখে মনটা নরম হল তার! পায়ে গতি কমল। ছেলেটা ছোট, এত জোরে কি করে দৌড়বে? এগিয়ে এল সে ছেলের কাছে, "দাঁড়ালে হবে না বাবা, ছুটতে হবে। না ছুটলেই!" ছেলেকে বলতে বলতেই শিউরে উঠল নিশি, চোখের উপর দিয়ে বায়োস্কোপের মত ভেসে গেল কিছু দৃশ্য। কেউ জানে না, কেউ কখনো জানবে না। তাকে ছুটতে দিত না তারা। তারা ভয়ঙ্কর, তারা দিগ্বিজয়ী নেকড়ে-মানুষ। তবুও এই যে তিনি ভারতের বর্ডারের দিকে ছুটতে পারছেন, সেটাও তারা করুণা করেছে বলেই! কিন্তু করুণা কেন করল?
মাথা ঝাঁকিয়ে বীভৎস স্মৃতিকে সরিয়ে দিলেন নিশি। ছেলেকে বললেন, "ছোট, বাবা ছোট!"
শিশুপুত্র জিজ্ঞাসা করল, "কেন বাবা? কেন ছুটব? এমন পুকুর, পুকুরে এমন ইলিশ মাছ, তাছাড়া রামধন কাকুর একটা মেয়েও আছে। সবে সবে লাইন হচ্ছিল"
দাঁত খিঁচালেন পিতা, "ইলিশ গলায় বেঁধে পুকুরে ডুবে মরো গে বেয়াদপ ছেলে, লাইন হচ্ছিল! অ্যাঁয়, রামধন কাকু এখন রমজান চাচা। বুঝেছ হে? লাইন হওয়াতে গেলে চ্যাং কেটে গলায় পরিয়ে দেবে। তখন আর লাইনের বিষয় থাকবে না। এখন ছোট হতভাগা।"

কিশোর জ্যোতি চিন্তায় পড়ল, তবে চ্যাং কাটার কথায় সে ভয় পেয়েছে! চ্যাং গেলে আর থাকল কি? "লাইন গেলে লাইন পাওয়া যায়, চ্যাং গেলে চ্যাং নেভার" (নেপোলিয়ন বা এরম কেউ বলেছিলেন।) কিন্তু রামধন কাকু রমজান হলেন কেন?
ছুটতে ছুটতেই জিজ্ঞাসা করল ছোট্ট জ্যোতি। নিশি দাঁত কড়মড় করে বললেন, "দিজ ব্লাডি মালুজ"
নিশি শিক্ষিত লোক, রাগলে ইংরাজিতে বলেন। জ্যোতি বুঝল না এত রাগের কারণ।
বলল, "কেন বাবা? আমরাও তো মালু, আমাদের পাশের বাড়ির আসগর চাচা তো বলে।"
"সেটাই তো দুর্ভাগ্য।" বললেন নিশি, "তাই তো দৌড়চ্ছি, নাহলে তো জমি বাঁচাতে লড়তাম।"
এই কথার গভীর প্রভাব পড়ল কিশোর জ্যোতির কোমল অন্তঃকরণে। তার লাইন কেড়ে নেওয়া হয়েছে চ‌্যাং ছিনিয়ে নেবার ভয় দেখিয়ে। তাকে এখন দৌড়তে হচ্ছে!
হঠাৎ কিশোর জ্যোতির মনে এক অদ্ভুত ভাব এলো, "আচ্ছা যদি এই বিভেদ না থাকত? যদি সবাই হত নেকড়ে-মানুষ? তবে কি আর লাইন করার জন্য চ্যাং-এর বিপদ হত?
না হত না।" ছোট ছোট পায়ে ছুটতে ছুটতেই আপন মনে বলে কিশোর জ্যোতি। "শুধু যে লাইন থাকত তা নয়, নেকড়ে-মানুষ হলে তাকে ছুটতেও হত না। পুকুর, ইলিশ এমনকি রামধন কিংবা রমজান চাচার মেয়ে, সঅঅঅঅব থাকত, সব। অতএব!" চোয়াল শক্ত হল ছোট্ট জ্যোতির, সাম্যই পারে, সাম্যবাদই সব সমস্যার সমাধান। সবাই নেকড়ে-মানুষ হবে। কাউকে কখনো আর পালাতে হবে না। অপদার্থ অলড়াকু মালু নিপাত যাক। নেকড়েতুতো সাম্যবাদ মুক্তি পাক।

এভাবেই জ্যোতি সারাজীবন সাম্যবাদের হয়ে লড়াই করবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিল, এই অসাম্যের শেষ দেখতেই সে ছিল মরীয়া।

- ("নিশির ব্যাটা থেকে শালীচরণ"
পেয়ে যাবেন আপনার নিকটবর্তী বাম পুস্তকালয়, এখনি অর্ডার দিলে পাবেন ৭% এর অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট।