Subroto Chatterjee's Album: Wall Photos

Photo 52 of 58 in Wall Photos

বাম জমানায় সায়েন্টিফিক রিগিং নিয়ে সোচ্চার হওয়া আজকের মুখ্যমন্ত্রী কেন ইভিএম নয়, ব্যালট চাইছেন?

এই সায়েন্টিফিক রিগিং কি? এতে এমনই বা কি আছে। কেন এই শতাব্দীতে পৌঁছেও ব্যালটের প্রয়োজন জরুরী হয়ে উঠলো। আসলে রাজনৈতিক ভাবে যত ধরনের বদমাইসি করা যায় সব ভামেরা শিখিয়ে গেছে। ক্ষমতা দখলে রাখতে যত নিম্নমানের এবং নিম্নরুচির রাজনীতি করা যায় সবই ভামেরা শিখিয়ে গেছে। ধমকানো, চমকানো থেকে খুনের রাজনিতি, ভামেদের জুড়ি মেলা ভার। উদাহরন, ত্রিপুরা, কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গ। রাজনীতিতে অপসংস্কৃতির আমদানী থেকে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তদের অনুপ্রবেশ সবই ভামেদের সৃষ্টি। এই পেশী শক্তির আস্ফালন বাংলার রাজনীতিতে শেষ কথা বলবে। বাংলার মুক্তি নেই এর থেকে। কারন এই ধরনের রাজনীতি কাল ভাম জমানায় যারা করতো আজ তারাই আজকের শাসক দলের সম্পদ। আগামী দিনে অন্য কোন দলে...

আসলে এই সায়েন্টিফিক রিগিং সত্যিই সায়েন্টিফিক । প্রতিটি পদক্ষেপে সুচতুর রাজনৈতিক পরিকল্পনা। আবার এই পরিকল্পনা প্রতি বছর পরিবর্তিত হত। আজ একরকম তো কাল অন্য অন্য কোন নির্বাচনে। পদ্ধতিগত ধরনও আলাদা। দলের মাথায় বসে থাকা বড় বড় পাকা মাথার নেতারা এই পরিকল্পনার জন্ম দেন আর তার সঠিক এবং সফল প্রয়োগ করেন দলীয় কর্মীরা। এর জন্যে সংগঠনের প্রয়োজন। যা ভামেদের ছিল। অস্বীকার করার জায়গা নেই, আজ ভামেরা হয়তো হয়তো অস্তিত্ব সংকটে ঠিকই কিন্তু বামপন্থা বাংলার রাজনীতিতে ভীষন ভাবে বিদ্যমান। আজ নয়তো কাল সংগঠন ডাক দিলে দলীয় কর্মীরা যে যেই দলে থাকুক সংগঠনে ফিরে যাবে। বামপন্থা একটা মতবাদ, একবার রক্তে মিশে গেলে সারা শরীরে পচন ধরিয়ে দেবে। মৃত্যু না হওয়া অবধি নিস্তার নেই। সেইদিনের বামপন্থীরা যারা আজ শাসক দলে তা কেবলই নিজেকে বাঁচাতে এবং নিজের সাম্রাজ্য বাঁচাতে এখানে দলীয় আনুগত্য বলে কিছুই নেই। আজকের শাসকের সঙ্গে সেদিনের বামেদের তফাৎ এখানেই, বামেরা যা কিছু করতো সব সংগঠন দিয়ে, দলীয় কর্মীদের কাজে লাগিয়ে আর আজকের শাসক দল করেন প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে।

এবার আসল কথায় আসি, সায়েন্টিফিক রিগিং কি? আসলে এর শুরু হয় ভোটার লিস্টে নাম তোলা থেকে আর শেষ হয় গননা এবং গননা পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা দিয়ে। প্রতিটি ধাপেই থাকে রাজনৈতিক পরিকল্পনা ...
1. প্রথম ভোটার লিস্টে নাম তোলার সময় সাধারন ভোটারের সাথে সাথে থাকে অবৈধ ভোটার। যেমন যারা মারা গেছে তাদের নাম, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নাম এবং ভুয়ো ভোটার যাদের কোন অস্তিত্ব নেই। সবার নাম লিস্টে তুলে নেওয়া হত।

2. এবার তৈরি হত এলাকা ভিত্তিক ভোটারদের রাজনৈতিক পরিচয়ের নিখুঁত তালিকা। কোন ভোটার কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার উপর নির্ভর করে, এবার চলে ধমকানো, চমকানো এবং প্রয়োজনে নেতাকে গায়েব করে দেওয়া।

3. তারপর ভোটের মনোনয়নের সময় ভয় দেখানো, ফর্ম তুলতে না দেওয়া। কেউ তুলে জমা দিলে পাল্টা ভয় দেখিয়ে তাকে মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্যে চাপ দেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। বাকী থাকলো নিরীহ ভোটার। এবার এদের ভোট দিতে না দেওয়া, ভয় দেখানো, ছাপ্পা মারা, বুথ দখল ইত্যাদি ইত্যাদি ।

4. যে কোন নির্বাচনে যে কোন এলাকা থেকে জিততে হলে সেই এলাকার সব বুথ দখল করত না এরা, এখানেও পরিকল্পনা। প্রথম থেকেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ভোট সংখ্যার নিরিখে এলাকা দখলের পরিকল্পনা হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যন্ত গ্রামীন এলাকাকে নিশানা করা হয়। যেখানে পুলিস সহজে আসবে না। এমনিতেই আসতো না, সবই তো দলদাসের ভুমিকা নিত। নিখুঁত পরিকল্পনা এবং নিখুঁত হিসেব বাড়ী ধরে ধরে। কোন ভোট কোন দিকে। সাথে শাসকের রক্তচক্ষু। এখানে হার্মাদরা থাকতো সামনের সারিতে। পরে মাননীয়া সেই ভয়টা দূর করে মানুষকে বুথমুখী করাতেই বামেদের এই পরাজয়।

5. এতো গেলো বুথের বাইরে, বুথের ভেতরে চলে আরও এক খেলা। যা ম্যানেজ করা হতো দলদাস সরকারী কর্মীদের দিয়ে। এদের সহায়তায় চলতো ছাপ্পা, ভুয়ো ভোট, বুথ দখল, ব্যালট পেপার কিংবা ব্যালট বক্সের পরিবর্তন ইত্যাদি ইত্যাদি। এখানেও হার্মাদরা সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ভোট করিয়ে নিত। বিরোধী দলের এজেন্টদের বসতেও দিত না। এতে সহজ হতো পরিকল্পনার সার্থক রূপায়নে।

6. এমনকি গননা কেন্দ্রেও চলত সর্বশেষ লড়াই। ব্যালটের হিসেবে কারসাজি। গননায় কারসাজি। ব্যালট পেপারের প্রতিটি বান্ডিলের উপরে এবং নীচে শাসকদলের কাগজ আর ভেতরে বিরোধী দলের। সুপরিকল্পিত ভাবে সাজানো হতো বান্ডিলগুলো। চোখের সামনে দিয়ে এক দলের ভোট অন্য দলে চলে যেত। ধরা পড়তো না। এমন অসংখ্য পরিকল্পনা মধ্যে দিয়ে সফল এবং সার্থক করতো সায়েন্টিফিক রিগিং। আমি তো মাত্র কয়েকটি উদাহরন তুলে ধরলাম।

এই যে ইভিএম-এর পরিবর্তে ব্যালটের ভোটে এতো সুফল পাওয়া যায় তা শাসক দল হাতছাড়া করবে কেন বলতে পারেন। যা ইভিএম-এ সম্ভব নয় তা ব্যালটে সম্ভব তবে কেন শাসক পুরানো পদ্ধতিতে ফিরে যাবে না। কেন আন্দোলনে নামবে না। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ই তো দেখলাম গগনা কেন্দ্রে শাসক দলের প্রার্থী কি ভাবে ছাপ্পা মারছে। এগুলো কি ইভিএম হলে সম্ভব হতো??? যা কিছু করা যায় তাও সময় সাপেক্ষ। বড় জ্বালা। গনতন্ত্রের নামে গ্যাড়াতন্ত্রকে কায়েম করা মহা মুশকিল এই ইভিএমে। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে মামাটিমানুষের জয়ধ্বনির নিলজ্জ লোক দেখানো প্রয়াস। ভোটে জিতলে ইভিএম ভালো নচেৎ নয়। অদ্ভুত এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। সব শেষে বাসের কন্ডাকটারদের মতো বলতে হয়, দাদা সামনে দাঁড়াবেন না। পেছনের দিকে এগিয়ে চলুন ...
✍️ রণজিৎ দাস।