পরিস্থিতিটা একবার কল্পনা করুন :-- আপনার চার হাত-পা চারজন চেপে ,আপনাকে ধরে রেখেছে মাটির সাথে।একজন বয়স্ক ব্যাক্তি,যার গায়ে সাদা পোশাক,মাথায় সাদা টুপি,সে একটা রামদা শান দিতে দিতে আপনার দিকে তাকিয়ে, স্নিগ্ধ হাসি মুখে এনে বলছে
" বাবারে নড়িসনে,গলাডা বাড়ায়ে দে।তোরও কষ্ট হবে নানে,আমারো হবে নানে "
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের চলমান সংকট সামলাতে তৈরী করে 'শান্তি-কমিটি'।নাম শান্তি কমিটি হলেও এদের কাজ ছিল,রাজাকারদের (পাকিস্তান সরকারের পক্ষে থাকা বাংলাদেশী) নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযোদ্ধা দের খুন করা।
এই ধরনের ই এক শান্তি-কমিটির সদস্য ইউসুফ আলী তাদের শান্তি কমিটির মিটিং এ বলেছিল :--
" মালাউন খতম করো, এদেশ হিন্দুদের নয়, এদেশ মুসলমানের। মহিলাসহ হিন্দুদের মালামাল গণিমতের মাল। এ সবাই ভোগ করতে পারে, এতে কোনো অপরাধ নাই। সবশেষে বলেছিলেন, লোটো পোটো খাও, মালাউন খতম করো।"
১৯৭১ সালের ২১ মে রামপাল থানার ডাকরা গ্রামে এবং ডাকরা কালীবাড়িতে হাজার হাজার হিন্দু এসে আশ্রয় নেন, সেখান থেকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য। ইউসুফ আলী স্থানীয় রাজাকার রজ্জব আলী ও সিরাজ মাস্টারকে নির্দেশ দেন কালীবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু লোকজনদের মেরে ফেলার জন্য।
তার এই নির্দেশেই সেদিন ডাকরা কালীবাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ৫০০ থেকে ৬০০ হিন্দু ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাজাকার রজ্জব আলী মুক্তিযোদ্ধা দের গুলি করে মারত না,সে মারত কুপিয়ে কুপিয়ে।আর তার ফলে তার নাম ছড়িয়েছিল।আর তার দুই কিলিং মেশিন ছিল - আকীজউদ্দীন এবং মজিদ কসাই।
আর এই আকীজউদ্দীন বয়স্ক হওয়াতে সে কোমরের ব্যাথাতে বেশি নড়তে চরতে পারত না।তাই সে হাসি মুখে ভিক্টিম দের ওপরের ঐ কথা গুলি বলত।ডাকরা কালীবাড়িতে হিন্দু গনহত্যার পর এই আকীজউদ্দীন এবং মজিদ কসাই পুনরায় আরো একবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য,হিন্দুদের জমে থাকা মৃতদেহ গুলির ভেতর থেকে আহত বা জীবিত থাকা হিন্দুদের বের করে আনে এবং তাদের গলা কেটে হত্যা করে।
১৯৭১ এ পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পরে এ রাজাকার সিরাজ মাস্টার ও আকিজউদ্দীন গ্রেফতার হয়।কিছু সময়ের জন্য তাদের বাগেরহাট শহরে রাস্তার মধ্যে লোহার খাচায় রেখে দেওয়া হয়,যাতে পথচারীরা যাওয়ার সময় তাদের গায়ে থুথু ছেটাতে পারে।এর পর তাদের জেলে ঢোকানো হয়।কিন্তু সব পরিস্থিতি পুনরায় পাল্টে যায়,যখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে এবং বাংলাদেশের শাষন হাতে নেয়।এর পর ঐ আকিজউদ্দীন সহ প্রায় সমস্ত রাজাকারদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।এরপর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শাষন এবং ইসলামিক রাজনৈতিক জোটের শাষনে থাকার পর,আজ বাংলাদেশে বহু কট্টর ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব দেখা যায়,যারা ১৯৭১ সালে সরাসরি পাকিস্তান পন্থি ছিল এবং বাঙালি হিন্দু হত্যাকারী ছিল।আজকের যে ধর্মীয় কট্টর বাংলাদেশকে দেখছেন,তা মূলত এদের হাতেই গড়া।