(1944 সালের আশেপাশের সময় । সমগ্র ইউরোপ জুড়ে বেজে চলেছ বিশ্বযুদ্ধের দামামা । সমগ্র ইউরোপের আকাশ ছেয়ে গেছে মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তির যুদ্ধবিমানে । আকাশে আমদানি হয়েছে নতুন নতুন long-range বোম্বার । যেগুলি হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বড় বড় শহরগুলিতে বোমাবর্ষণ করে আসত । সেই সময় বড় বড় শহর গুলি কে রক্ষা করার জন্য দুই পক্ষই আকাশে ফাইটার মোতায়েন করে রাখা হত । )
হেরাল্ড ভন নাৎসি জার্মানির লুফট্ওয়াফে এক অত্যন্ত দক্ষ পাইলট । ব্যাটেল অফ ফ্রান্স এবং ব্যাটেল অফ হল্যান্ড এর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে তার। বর্তমানে তিনি জার্মানির হামবুর্গ শহর কে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত আছেন। এমনই এক দিন হঠাৎ তার এয়ার বেস এর সাইরেন বেজে উঠল । শত্রুপক্ষ আক্রমণ করেছে, বিদ্যুৎ গতিতে তিনি তার মেসাসমিট মি 163 কমেট ফাইটার নিয়ে আকাশে উড়ে গেলেন। কয়েক হাজার ফিট উপরে ওঠার পর কন্ট্রোল টাওয়ারের নির্দেশ মত জায়গায় পৌঁছে দেখলেন আকাশে দপ দপ করছে কয়েকটি আলোর বিন্দু । যা শত্রু পক্ষের বোম্বার বিমানের আলো । হেরাল্ড ভন দ্রুত তার বিমানের মুখ সেই দিকে ঘুরিয়ে নিলেন । কিন্তু তাকে অবাক করে সেই বোম্বার থুড়ি আলোর বিন্দু গুলি আরও দ্রুত দিক পরিবর্তন করে নিল । হেরাল্ড পুনরায় তার বিমানের মুখ সেই দিকে ঘুরিয়ে নিল এবং তার বিমানের ইঞ্জিনের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে সেই দিকে ছুটে গেল । দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সব চেয়ে দ্রুত গতির বিমান ছিল এই মি 163 কমেট সমসাময়িক অন্যান্য বিমানের থেকে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে উড়তে পারত এই বিমান ।যুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষের বিরাট বিরাট বোম্বার এর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই বিশেষভাবে এই বিমানটি ডিজাইন করা হয়েছিল । কিন্তু সেইদিন দুই যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জার্মান পাইলট কে অবাক করে দিয়ে সেই আলোক বিন্দু গুলি উল্কার গতিতে কোথায় মিলিয়ে গেল ।
হেরাল্ড ই প্রথম আর শেষ নন এরপর বিভিন্ন বৈমানিকেরা বারবার রাতের আকাশে এই ধরনের আলোকবিন্দুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন । রাতের আকাশে হঠাৎ করে আলোকবিন্দু গুলো আবির্ভাব হত এবং মিলিয়ে যেত । কখনও কখনও সেগুলি একটি নির্দিষ্ট ফরমেশন এ আকাশে উড়ত এবং বিমান গুলি কে অনুসরণ করত। যখনই কোন বিমান সে গুলোকে ধাওয়া করার চেষ্টা করত তার কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা আকাশে আবার মিলিয়ে যেত । প্রথমদিকে মিত্রপক্ষের সমর বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছিলেন যে এগুলি হল নাৎসি জার্মানির কোন নতুন অস্ত্র। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা জানতে পারেন যে জার্মানরাও এই ধরনের আলোক বিন্দু দেখেছে । এই অদ্ভুত আলোকবিন্দু গুলির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেকে বলেছেন এগুলি হল আকাশ প্রতিরক্ষা কামানের গোলা যেগুলি বিমানের কাছে কাছে বিস্ফোরিত হত । কিন্তু সেই ব্যাখ্যা টেকেনি । অনেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে এগুলো পাইলটদের হ্যালুসিনেশনের ফল এগুলোর কোনো অস্তিত্বই নেই । কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে যে সমস্ত পাইলটরা এই আলোকবিন্দুর দেখা পেয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকেরই বর্ণনা প্রায় একই ছিল , যা হ্যালুসিনেশন হলে অসম্ভব । ইউ এস এয়ারফোর্সের 415 নাইট ফাইটার স্কোয়াড্রন এর রাডার অপারেটর ডোনাল্ড জে মিয়ার প্রথম এই আলোক বিন্দুগুলি কে "ফু ফাইটার" নামকরণ করেন এবং এই নামটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায় । প্রসঙ্গত যুদ্ধের সময়ে এবং যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ এই "ফু ফাইটার" বা আলোকবিন্দু গুলির রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন এবং ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন , কিন্তু এরপরেও আজও এর কোনো উপযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি । https://en.m.wikipedia.org/wiki/Foo_fighter